মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে তোলপাড় চলছে ঝালকাঠি জেলা পুলিশে। জেলার নলছিটি, রাজাপুর এবং সদর থানার কতিপয় কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিব্রত জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা। ঝালকাঠি ও রাজাপুর থানার একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হয়েছে মামলা। এমনকি থানা ঘেরাওয়ের মত ঘটনাও ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন বিতর্কের ঝড় তুলেছেন মাদকসহ আটক হওয়া ঝালকাঠি পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক। তবে বিষয়টি নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরাসরি মুখ খুলছেন না মাঠ কর্মকর্তারাও।
শনিবার নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট এলাকা থেকে ইয়াবা ও গাঁজাসহ ঝালকাঠি জেলা ডিবি পুলিশ আটক করে রাজাপুর থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক মো. সিরাজ এবং মোটরসাইকেল চালক আতিকুর রহমান বাবুকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদকসহ উপ-পরিদর্শক সিরাজ এবং তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি নলছিটি থানায় সোপর্দ করে আতিকুর রহমান বাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝালকাঠি সদর থানায়। ঝালকাঠি সদর থানার এক উপ-পরিদর্শক বলেন, রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগর ইউনিয়নের নারকেল বাড়িয়া গ্রামের আতিকুর রহমান বাবুকে ডিবি পুলিশ সদর থানায় সোপর্দ করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আতিকুর রহমান বাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, এসআই সিরাজ এবং মোটরসাইকেলটি নলছিটি থানায় রয়েছে। ঝালকাঠি সদর থানার ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অপর এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে জানান, এসআই সিরাজের কাছে মাত্র দুই পুরিয়া গাঁজা পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ঝালকাঠি পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এসআই সিরাজ রাজাপুর থানায় কর্মরত ছিল। প্রায় ৩ মাস পূর্বে তিনি ৬ মাসের প্রশিক্ষণে যান টাঙ্গাইলে। প্রশিক্ষণ শেষে তার নলছিটি থানায় যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঝালকাঠি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহমুদ হাসান বলেন, সিরাজ মাদকসহ আটক হয়েছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। সাক্ষী দিতে এসে সে তিনদিন ধরে প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত ছিল। বিষয়টি জেলা পুলিশকে জানানো হলে এসআই সিরাজকে ডেকে প্রশিক্ষণে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয় সম্পর্কে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি তাজুল ইসলাম ও নলছিটি থানার ওসি সুলতান মাহমুদ বলেন, তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ঝালকাঠি ডিবি’র ওসি মো. কামরুজ্জামান। রাজাপুর থানার ওসি মুনির-উল গিয়াস বলেন, আড়াই মাস আগে এসআই সিরাজকে রাজাপুর থানা থেকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরে তিনি প্রশিক্ষণে যান। মাদকসহ আটকের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
সদর থানার ওসি তাজুল ইসলামের কাছে আতিকুর রহমান বাবুকে আটকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশে তাকে আটক করা হয়। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রাকিব জানান, তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। আর এ ধরনের কোন খবর তিনি জানেন না।
এদিকে ৩০ এপ্রিল নলছিটি থানা পুলিশ তৈকাঠী গ্রাম থেকে রাজীব হাওলাদার নামের নিরাপরাধ এক যুবককে গ্রেফতার করলে পরদিন ওই গ্রামের বাসিন্দারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বাচ্চুর নেতৃত্বে থানা ঘেরাও করে করে ওসি সুলতান মাহমুদসহ অপর তিন এসআইকে প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। তোপের মুখে পরে ওইদিন রাজীবকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনার পর রাজীবের মা সেলিনা বেগম নলছিটি থানার এসআই বিপ্লব মিস্ত্রি, এসআই ফিরোজ ও এসআই জসিমের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত ওই মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে রাজাপুরের কলেজ ছাত্র মো. ইমরান হোসেন আদনানকে থানায় ধরে এনে নির্যাতনের পর চুরি মামলায় ফাসানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় আদানান নিজেই রাজাপুর থানার ওসি মুনির-উল গিয়াস ও দুই উপ-পরিদর্শকসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। বর্তমানে এ মামলাটি বরিশাল পিবিআই তদন্ত করছে। এছাড়া গত ২৭ মার্চ ঝালকাঠি সদর উপজেলায় এক প্রধান শিক্ষকের হাত পা ভেঙে ও এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান তার সরকারি গাড়িতে করে থানায় সোপর্দ করেন। এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের নিশ্চুপ থাকার ভূমিকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ