কে এই গুরু দত্ত
পঞ্চাশের দশকে গুরু দত্ত ছিলেন একাধারে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা। চার ভূমিকাতেই তিনি ছিলেন সফল। শুধু তাই নয়, সময়ের চেয়ে গুরু দত্ত এগিয়ে ছিলেন। গুরু পরিচালিত ‘পিয়াসা’, ‘কাগজ কে ফুল’ ছবি দুটিকে বলা হয় বলিউডের শতবর্ষের অন্যতম সেরা সৃষ্টি। তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালের ৯ জুলাই। প্রকৃত নাম বসন্তকুমার শিব শংকর পাড়ুকোন। কলকাতার ভবানীপুরে শৈশব কাটে তাঁর। এ জন্যই বাঙালি নাম গ্রহণ করে হয়ে গেলেন গুরু দত্ত।
গীতা দত্তের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে
গুরু দত্ত ১৯৫০ সালে তখনকার বিখ্যাত গায়িকা গীতা দত্তের প্রেমে পড়েন। ১৯৫৩ সালের ২৬ মে। ধুমধাম করে সাতপাক ঘুরলেন গীতা-গুরু দত্ত। বিয়েতে দুই পরিবারেরই অমত ছিল। বিশেষ করে গীতা দত্তের পরিবার। কারণ, গীতা বাংলাদেশের জমিদার দত্ত বাড়ির মেয়ে। বলিউডে তার গান যথেষ্ট জনপ্রিয়। গুরু তখন সবে পা রেখেছেন বলিউডের হিন্দি ছবির দুনিয়ায়। জাতে মারাঠি ব্রাহ্মণ। কিন্তু মিঞা-বিবি রাজি তো ক্যায়া করেগা কাজি। তাই বিয়েটা হয়েই গেল।
ওয়াহিদার সঙ্গে প্রেম ও ঝড়
গীতা দত্তকে বিয়ের তিন বছরের মাথায় ১৯৫৬ সালে গুরু দত্তর সঙ্গে পরিচয় হয় ওয়াহিদা রেহমানের। এক ফিল্মি পার্টিতেই দুজনের আলাপ হয়। তিনি তাকে মুম্বাই নিয়ে আসেন। নিজের প্রযোজিত ‘সিআইডি’ ছবিতে খলচরিত্রে সুযোগ দেন তাকে। এরপর গুরু দত্তের ‘পিয়াসা’তে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন ওয়াহিদা। তাদের পর্দা-রসায়ন যেমন অনবদ্য ছিল, তেমনি ব্যক্তি জীবনেও তাঁরা ছিলেন পরস্পরের সেরা বন্ধু। স্নিগ্ধ ও ধীরস্থির স্বভাবের ওয়াহিদার প্রেমে পড়ে যান আবেগপ্রবণ গুরু দত্ত। ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে প্রেম গুরু দত্তের দাম্পত্য জীবনকে করে তোলে বিষময়। স্ত্রী গীতা দত্ত তাঁকে ত্যাগ করেন। যদিও তাঁদের বিচ্ছেদ হয়নি; কিন্তু তাঁরা পৃথকভাবে বাস করতে শুরু করেন, যা গুরু দত্তের মানসিক টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ তিনি যেমন ওয়াহিদাকে ভালোবাসতেন, তেমনি ভালোবাসতেন নিজের স্ত্রীকেও। দুজনের কাউকেই ত্যাগ করতে চাননি তিনি।
গুরুকে ছেড়ে যান ওয়াহিদা
ওয়াহিদার সঙ্গে প্রেমের পরিণতিতে গুরু দত্তের ব্যক্তিগত ও ফিল্মি ক্যারিয়ার যখন ভাটার মুখে তখন গুরু দত্তের কাছ থেকে দূরে সরে যান ওয়াহিদা।
আত্মহননের পথে গুরু
ওয়াহিদাকে হারানোর হতাশা গুরুর জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছিল। এই বিরহ ব্যথা সইতে না পেরে গুরু দত্ত ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর মদের সঙ্গে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে পান করেন। মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ ও অ্যালকোহলের বিষক্রিয়া মাত্র ৩৯ বছর বয়সি এই শিল্পীর অকাল মৃত্যু ঘটায়।
আত্মহত্যার আগে আশা ভোঁসলেকে ফোন
আত্মহত্যার আগে গুরু দত্ত ফোন করেছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আশা ভোঁসলেকে। জানতে চেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সেখানে আছেন কি না। আশা ভোঁসলেই শেষ ব্যক্তি যিনি গুরু দত্তের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগের দিন তিনি গিয়েছিলেন গীতার কাছে। কারণ তিনি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গীতা ছেলেদের দেননি। গুরু দত্তের ছেলে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মেনে নেননি। তার মতে এটি ছিল দুর্ঘটনা।