এসএসসির পরীক্ষার পর জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সবাই যখন উৎসবে মেতেছে। ঠিক তখনই জিপিএ-৫ পেয়েও আনন্দ উৎসবে নয়, জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত মাদারীপুরের রাজৈরের টেকেরহাটের শহীদ সরদার শাজাহান বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অদম্য মেধাবী সুমাইয়া মীম। হাসি নেই সুমাইয়ার মুখে। মা ব্যস্ত ঘরের কাজে আর বাবা এক সময়ের হকার ব্যস্ত পেট্রোল পাম্পে। অভাবে জর্জরিত পরিবারটি জিপিএ-৫ পাওয়ার আনন্দ নেই। সুমাইয়ার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বিত্তবানদের সহায়তার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা এবং শিক্ষকরাও।
মাদারীপুরের রাজৈরের টেকেরহাট বন্দর সংলগ্ন একচালা জরাজীর্ন ঘরে বসত বিজ্ঞান বিভাগের অদম্য মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া মীমের। বাবা এক সময়ের পত্রিকার হকার ছিলেন। বর্তমানে পেট্রোল পাম্প শ্রমিক ইসমাইল শেখ ও মা আমেনা খানমের ৪ ছেলে মেয়ের সংসার। জন্মের পর থেকেই অভাব অনটনেই বেড়ে ওঠে সুমাইয়া। দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাতেই বাবা হিমশিম খেত। এরই মাঝে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ৯ম শ্রেণি থেকে সকাল বিকেল প্রাইভেট পড়াতো সুমাইয়া। এভাবেই নিজের পড়ার খরচ কোন মতে সামাল দিত সে। কখনো পেট ভরে মান সম্মত খাবার জুটেনি পরিবারটির। ছিল না পর্যাপ্ত পোষাক পরিচ্ছদও। পর্যাপ্ত প্রাইভেট পড়ার সুযোগ না পেলেও যতটুকু পড়তো সেই শিক্ষকরাও অনেকেই টাকা নিত না। আশেপাশ থেকে মা ভাত চেয়ে পরীক্ষার সময়সহ অনেক সময়ই খেতে দিত সন্তানদের। এভাবেই অষ্টম শ্রেণিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় সুমাইয়া।
এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও আর্থিক দৈন্যতার কারণে হাসি যেন ম্লান পরিবারটিতে। অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্বেও কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শংকিত এখন পরিবারটি। সহযোগিতা পেলে সুমাইয়া ইংরেজির বড় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, শিক্ষক মা-বাবাসহ সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আগামীতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত।
সুমাইয়ার বাবা ইসমাইল শেখ বলেন, ৪ জনের সংসারে সামান্য আয়ে চাল ডাল কেনাই দায়। আমি কি করো মেয়ে লেখা পড়ার খরচ চালাবো। মেয়ের লেখাপড়া জন্য যদি বিত্তবানরা সহযোগিতা করে তাহলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।
শহীদ সরদার শাজাহান বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজের শিক্ষক হারাধন বালা বলেন, ও খুব মেধাবী। তবে ওরা বাবা খুব গরীব। বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সহজ হতো।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার