বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে। পানির দরে গরু বিক্রি করে দেওয়ায় গরুর বিষ্টা না পেয়ে জ্বালানি সংকটেও পড়েছেন এ সকল এলাকাবাসী। হাওরের পানি দূষিত হওয়ার পর এখন টিউবয়েলের পানিও দুর্গন্ধ হয়ে পড়েছে। জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীসহ হাওরের বিভিন্ন গ্রামে এখন একই সমস্যা।
এদিকে নেত্রকোনা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বলছে এলাকা চিহ্নিত করে টিউবওয়েল বরাদ্দ দেন জনপ্রতিনিধিরা, জনস্বাস্থ্যের কাজ শুধু বাস্তবায়ন করা। তবে বাড়ি ঘরে পানি না উঠায় টিউবওয়েল নষ্ট হওয়ার তেমন খবর পাওয়া যায়নি বলেও তাদের দাবি।
হাওরাঞ্চলের মল্লিকপুর, নারাইজসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাঠাৎ করেই অকাল বন্যায় হাওরের ৭০ হাজার হেক্টর জমির কাচা-পাকা ধান তলিয়ে যায়। ধান তলিয়ে যাওয়ার পর হাওরের পানিও হয়ে পড়ে দূষিত। যে কারণে মাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ সব ঘটনার পর মৎস্য এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উদ্যোগে পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কিন্তু পানিতে এখনো আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে। হাওরের পানিতে ভেসে ভেসে আসা খড়কুটো সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চলছে রান্নার কাজ। পানি দূর্গন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন এসকল হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা। বিশুদ্ধ পানি সংকট রয়েছে হাওরাঞ্চলের স্কুলগুলোতেও। হাওরের পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। গো-খাদ্য সংকটে পানির দরে গরু বিক্রি করায় এসকল এলাকার জ্বালানিতেও বেশ প্রভাব পড়েছে। এক দুইটা গরু যাদের রয়েছে তারা দুই তিন দিনের গরুর বিষ্ঠা জমিয়ে কিছুটা জ্বালানি তৈরি করে রান্নার উপযোগী করে তুলছেন বলে জানালেন মল্লিকপুর গ্রামের গৃহবধূ শংকরি ও সুজাতাসহ অনেকেই। এরপর কোনো রকমে এক বেলা রান্না করেই দিন পার করছেন এ সকল হাওরবাসী।
একইভাবে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহে চরম বেগ পোহাতে হচ্ছে মোহনগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রাম ছাড়াও নারাইজ, শেওড়াতলী, খালিয়াজুরীর উপজেলার রাজিবপুর, মেন্দীপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের।
মল্লিকপুর গ্রামের অনুপ তালুকদার বলেন, এবছর যেভাবে ফসল ডুবেছে গত অর্ধশতাধিক বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে। একটি ধানও কৃষক তুলতে পারেনি। এখন কৃষকের পাশাপাশি গো-খাদ্য সংকটে গরুগুলোও বিক্রি করা হয়েছে পানির দরে। পানিতে এখনো দুর্গন্ধ রয়ে গেছে। এই পানিই আমরা ব্যবহার করছি। পঁচা বন এখনো ভাসছে। এই সমস্যা আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারছে না।
এদিকে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহরাজ হোসেন বলেছেন, হাওর এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি টিউবওয়েল বা যে কোনো বরাদ্দ সাইট দেখে দেন জনপ্রতিনিধিরা। আমরা শুধু বাস্তবায়ন করি। বরাদ্দ আরেকটু বাড়িয়ে দিলে আর জনপ্রতিনিধিরা সঠিক জায়গা নির্বাচন করলে সমস্যা একেবারেই থাকবে না। তাছাড়া এবারের বন্যায় বাড়ি ঘরে পানি উঠেনি। ফলে টিউবওয়েল নষ্টের খবর তেমন পাওয়া যায় নি। কিছু কাঁচা পায়খানা নষ্ট হয়েছে। সেগুলো নতুন করে স্থাপনের ব্যবস্থাও হয়েছে।
তবে হাওরাঞ্চলে বর্ষাকালে প্রতিবছরই কিছুটা পানির সমস্যা থাকেও বলে জানালেন এই কর্মকর্তা।
বিডি প্রতিদিন/৯ মে, ২০১৭/ফারজানা