টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চেষ্টা থমকে দিল পুলিশ। এতে দুই দালালসহ ১৯ জনকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার (৯ মে) ভোররাত সাড়ে ৪ টার সময় টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের আটক করা হয়।
এরা হচ্ছেন, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকার মুক্তার আহম্মদের ছেলে মোঃ খলিল প্রঃ ইসমাইল (৩৬) ও মোঃ তৈয়বের স্ত্রী বুলবুলি (৩৫)। এ সময় আরো কয়েকজন পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান জানান, টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদে মানব পাচার বিরোধী এ অভিযান পরিচালনা করে। দুটি বসত ঘরে পাচারে অপেক্ষায় অবস্থান কালে নারীসহ ১৭ জন মিয়ানমার মুসলিম রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। এরা টেকনাফের লেদা ও উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েক মাস আগে আশ্রয় নেয়। পরে দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার যাওয়ার জন্য বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত টেকনাফ সদরের হাঠিয়ারঘোনা এলাকায় অবস্থান নেন। তিনি আরো জানান, দালাল ইসমাইল ও নারী দালাল বুলবুলি প্রতিজন থেকে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে ফিশিং ট্রলারের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পৌঁছে দেওয়ার জন্য এদের জড়ো করে রাখে।
পুলিশ খবর পেয়ে পাচার প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়। এসময় উদ্ধার করা হয়, মিয়ানমারের মংডু জেলার ঝিমংখালী থানার মরিক্ষং এলাকার নুর হোসেনের ছেলে জামাল (২২), গোলাব্বরের ছেলে জোবাইর (১৯), খুইল্যা মিয়ার ছেলে মোঃ ইলিয়াছ (১৯), নুর ছালামের ছেলে মো ঃ রফিক (১৯), লাল মিয়ার ছেলে মোঃ ইদ্রিস (১৯), আবুল কালামের ছেলে নুর সালাম (১৯), সিকান্দারের ছেলে মোঃ সেলিম (১৯), আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোঃ আইয়ুব (২০), জাফর আহম্মদের ছেলে মোঃ ইউনুস (৪০), সোনা আলীর ছেলে জোবায়ের ইসলাম (১৯), নুর আলমের ছেলে জাহেদ হোসেন (১৯), কাশিম আলীর ছেলে আবদুল হক (৪০), সৈয়দুল আমীনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (১৯), আবদুল হকের মেয়ে সমিরা আক্তার (১৯), ইমান হোসেনের স্ত্রী রফিকা বেগম (২৫), বুচিডং জেলার বলিবাজার এলাকার নুর হাসেমের স্ত্রী আজিদা বেগম (১৯) ও জলিলের ছেলে মোঃ রফিক (২০)। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, ৪ জন নারী ও ১ জন শিশু রয়েছে।
অভিযানকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ ভাবে মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ওই স্থানে অবস্থান করছিলো বলে স্বীকার করে। তাই আসামিরা মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ করে ১৯৪৬ সনের বৈদেশিক নাগরিক সম্পর্কিত আইনে ১৪ ধারার অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়।
ভিকটিম রফিকা বেগমের মেয়ে শিশু সুমা আক্তার (৪) ও বুলবুলির ছেলে কেফায়েত উল্লাহ (৫) এর কোন উপযুক্ত অবিভাবক না থাকায় তার সাথে রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
টেকনাফ মডেল থানায় ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান আরো জানান, এ ব্যাপারে অনুপ্রবেশ ও মানব পাচার আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃত দালাল ও ভিকটিমদের কক্সবাজার জেলা সদরে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক বছর ধরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচার বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি মিয়ানমারে দমন পীড়নের অভিযোগে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পৌনে এক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ফের পাচার তৎপরতা শুরু হয়।
বিডি প্রতিদিন/৯ মে ২০১৭/হিমেল