কখনো রহিম, কখনো বা করিম আবার কখনো লিটন (ছদ্দ) নামে ঠাকুরগাঁওয়ে বিআরটিএ অফিসে বহিরাগতদের ছড়াছড়ি। এদেরকে দিয়েই কাজ করিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ঘুষ। এদিকে বহিরাগতদের পক্ষে সাফাই গেয়ে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা সার্কেলের সহকারি পারিচালক জনবলের অভাবকে দায়ি করলেন। এ সুযোগ অবলম্বন করে তাদের দিয়ে জেলা বিআরটিএ অফিসের মটরযান পরিদর্শকের কক্ষে কাজ করতে আসা অনেকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ঘুষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন বহিরাগতরা কেউ যদি ঘুষ নিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় এই দুই জেলা নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ভবনে অবস্থিত বিআরটিএ সার্কেল অফিস। জেলার ৫টি উপজেলা ছাড়াও পঞ্চগড়ের যানবাহন চালকরা বিভিন্ন কাজে আসেন এই বিআরটিএ অফিসে। মটরযান পরিদর্শকের কক্ষেই সংশ্লিষ্ট সব কাজ হয়। কিন্তু কাজ করতে আসা বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ চা খাওয়ার কথা বলে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ যত নেয়া যায় তাই নিচ্ছেন সেবা প্রদানকারিরা। এদের মধ্যে বহিরাগতরাই অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছেন। যা দিন শেষে মটরযান পরিদর্শকের মাধ্যমে ভাগ হয়। এ যেনো দেখার কেই নেই। অবৈধভাবে টাকা নেয়া যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসহায় মানুষ তাই প্রয়োজনের তাগিদে অবৈধ বা বৈধ তা বিচার না করেই কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শহিদুল ইসলাম, রতন, রফিকুলসহ বেশ কয়েকজন জানান, ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসে টাকা ছাড়া কাজ হয় না এটা সবাই জানে। এটা নতুন কিছু নয়। তবে নতুন জেলা প্রশাসক আসার পর কিছুটা সচ্ছতা ফিরে এসেছে। তবে মটরযান পরিদর্শকসহ দু-একজন কর্মকর্তার কারণে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। অপরদিকে বহিরাগতরা গড়ে সবার কাছে কিছু হলেও কাজের বিনিময়ে ঘুষ নিচ্ছেন। যা বিনা পয়সায় করে দেয়ার কথা। আবার দেখা গেছে ঘুষ না দিলে লাইসেন্স পরীক্ষায় উর্ত্তিন করছেন না। এ যেন 'টাকা দিলে সব হয়, টাকা না দিলে নয়।'
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সার্কেল অফিসে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ ৮-১০ জন লোক। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই বহিরাগত বলে পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু লাইসেন্স কিংবা যানবাহনের সাথে জড়িত বিভিন্ন কাজে সেবা নিতে আসা মানুষ এসব বুঝতে পারেন না। সেবা নিতে আসা ৯৫ ভাগ মানুষ মনে করেন বহিরাগতরাও ওই অফিসের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারি। না বুঝে কাজের বিনিময়ে চা কিংবা মিষ্টির অজুহাতে দাবি করা হয় টাকা। নইলে ঘুরতে হয় কয়েকদিন। তারপরও কবে হবে কাজ তা অনিশ্চিত। তাই কিছু হলেও নগদ দিতে হয় তাদের। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এদের মধ্যে অনেকেই বহিরাগত। আর তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার মটরযান পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন জানান, বড় বড় পত্রিকায় রিপোর্ট করেন, আমি ভিন্ন জায়গায় বদলি হবো এই তো? সাংবাদিক এই জন্যই গুম হয়। সাংবাদিকদের ২-১ শ' টাকা দিলেই সব ঠিক হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা বিষয়ে মন্তব্য করেন তিনি ।
বাংলাদেশ রোড ট্রন্সপোর্ট অথরিটি ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় সার্কেলের সহকারি পরিচালক মোঃ ফারুক আলম জানান, আমাদের জনবল কম বলে আমরা ২-১ শ' টাকা দিয়ে বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছি। এটা আমাদের সুবিধার জন্য। জনবল থাকলে তাদের প্রয়োজ ছিল না। কিন্তু কেউ যদি কারো কাছে ১টাকা নিয়ে থাকে প্রমাণ করে দিবেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা বিআরটিএর তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় সার্কেল অফিসে ৭টি পদে জনবল রয়েছে মাত্র ৪ জন। এদের মধ্যে সহকারি পরিচালক পদে রয়েছে ১ জন, মটরযান পরিদর্শক পদে থাকার কথা ২ জন, রয়েছে ১জন। মেকানিক্যাল পদে থাকার কথা ২ জন, রয়েছে ১জন। অফিস পিয়ন নেই। এছাড়া অফিসটি সপ্তাহে ৩ দিন খোলা থাকে।
বিডি প্রতিদিন/১০ মে ২০১৭/হিমেল