ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাল মাস্টারের নির্দেশে এক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জগন্নাথপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামে চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার মানুষ ওই চেয়ারম্যানসহ নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
তবে ওই চেয়ারম্যান নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে বলেন, 'আমি মারিনি, মেরেছে অন্য লোকেরা।'
জানা গেছে, গত রবিবার রাতে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলালের নির্দেশে কয়েকজন যুবক তিন সন্তানের জননীকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তাকে নগ্ন করে নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে দুই লাখ টাকাও দাবি করা হয়।
একই সময়ে খোঁচাবাড়ী হাটের ব্যবসায়ী ও গৌরীপুর গ্রামের প্রমথ চন্দ্র রায়কেও সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে নির্যাতন করে।
জানা গেছে, এসব কাজে নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান, কেদারনাথ রায় ও নারী সদস্য মালেক বেগম।
নির্যাতনের শিকার সদর উপজেলার দৌলতপুর মৌজার খোচাবাড়ি হাট এলাকার ওই নারী অভিযোগ করেন, তার একমাত্র সম্বল ভিটের ওপর চেয়ারম্যানের চোখ পড়েছে। তিনি (চেয়ারম্যান) মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে চান।
তিনি বলেন, 'ওই চেয়ারম্যান তিন মেম্বারের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীকে দিয়ে আমাকে নগ্ন করে নির্যাতন করে। এসময় দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে বাড়ি ছাড়তে বলে।'
ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, 'মহিলা মেম্বার মালেকা আমাকে নগ্ন করে ইউনিয়ন পরিষদে মারধর করে। আর এই দৃশ্য দেখেন চেয়ারম্যান, পুরুষ মেম্বার আর সন্ত্রাসীরা।'
তিনি বলেন, 'স্বামী চলে যাওয়ার পর আমার ওপর তিন সন্তানের দায়িত্ব পড়ে। দোকানে-দোকানে কাজ করে দুই মেয়ের বিয়ে দেই। ছেলে বড় হলেও সে বিয়ে করে আলাদা থাকে।'
স্বামী পরিত্যক্তা ওই নারীর ছোট মেয়ে জানায়, টিপ সই দেয়ার নাম করে তার মাকে বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে যায় চেয়ারম্যানের লোকেরা।
গৌরীপুর গ্রামের প্রমথ চন্দ্র রায়ের অভিযোগ, তাকেও একই সময়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং টাকা দাবি করা হয়।
ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান ও কেদারনাথ রায় জানান, ওই দুজনের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইন্দ্র নাথ রায় জানান, আইন কেউ হাতে তুলে নিতে পারে না। ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। অভিযোগ থাকলে তিনি পুলিশকে জানাতে পারতেন। শারীরিক নির্যাতন কেন?
ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলাল বলেন, 'সব কিছু মিথ্যা। হাজার-হাজার মানুষ ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।'
ঠাকুরগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। এ ঘটনায় দুজন হাসপাতালে রয়েছেন। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/১০ মে, ২০১৭/ফারজানা