পঞ্চগড়ে প্রতিবন্ধি শিশুকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করেছেন এক মা। রবিবার সকালে সন্তানকে রেল লাইনে শুইয়ে দিয়ে পরে নিজে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। নিহত মায়ের নাম শ্যামলী বসাক। তার স্বজন ও প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
প্রতিবেশীরা জানায়, বিয়ের পর নিজের অপছন্দের স্বামীর ঘর ছেড়ে শ্যামলী বসাক আশ্রয় নেন বাবার বাড়ি। বাবা অরুন বসাকের নিজের ভিটে বাড়িটিও নেই। অন্যের জমিতে একটি কুড়ে ঘর তুলে কোন রকমে মাথা গুজে মুড়ির ব্যবসা করে দিন পার করছেন তিনি। সংসারে ৪ মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ।
প্রতিবেশী আদুলীবসাক জানায় বাবার বাড়িতে এসে এক প্রতিবন্ধি সন্তানের মা হন শ্যামলী বসাক। এর মধ্যে স্ত্রী শ্যামলী বসাকের ওপর মামলা করে তার স্বামী। পরে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে শ্যামলী বসাকের বাবা। এদিকে অপছন্দের স্বামীর সাথেই সংসার করার চাপ দেয় বাবা মা সহ আত্মীয় স্বজন। বাবার বাড়িতে থাকার যায়গা নেই বলে একসময় শ্যামলী বসাক কে প্রতিবন্ধি সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয় নানার বাড়িতে।
গত এক বছর আগে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত ১ হাজার আট’শ টাকায় শিক্ষকতার চাকুরী পায় । ওই সংস্থাটির সুপারভাইজার বেলাল হোসেন জানান শিকক্ষতায় বেশ ভাল ছিলে শ্যমলী বসাক। ক্লাস ফাঁকি দিতেন না তিনি। তিনি বলেন কিন্তু প্রতিবন্ধি সন্তানের চিকিৎসা এবং সংসারের ব্যায়ের জন্য সামান্য এই টাকায় দিন চলছিলনা তার।
এদিকে স্বামীর ঘরে ফিরে যাবার সামাজিক এবং পারিবারিক চাপ বাড়ছিল। স্বাধীন চেতা শ্যামলী স্বামীর বাড়ি ফিরে যেতে না চাইলে একসময় মানসিক অসুস্থ হিসেবেও বলা হয় তাঁকে।
মামা বিমল বসাক বলেন সন্তানের চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল শ্যামলী বসাক।চিকিৎসার জন্য প্রতি শনিবার পঞ্চগড় প্রতিবন্ধি হাসপাতালে সন্তানকে নিয়ে যেতে হতো তাকে। আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে সন্তানকে সুস্থ করে দেবে বলে দুই হাজার দুই’শ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এক প্রতারক চিকিৎসক।
এমন নানা যন্ত্রনার মধ্য দিয়েই গত শনিবার সকালে সন্তানকে নিয়ে পঞ্চগড় প্রতিবন্ধি হাসপাতালে যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন শ্যামলীবসাক। হাসপাতালেও যান তিনি। কিন্তু বাড়ি ফেরার রাস্তা বাদ দিয়ে রেল লাইনের ধার দিয়ে হাটতে থাকেন । একসময় বকুলতলা এলাকায় পাবর্তিপুর থেকে ছেড়ে আসা লোকাল ট্রেনটি দেখতে পেলে প্রথমে প্রতিবন্ধি সন্তানটিকে রেল লাইনে শুইয়ে দেন। পরে নিজে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন ।
এদিকে বাবা মার আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবারের হাতে লাশ হস্তান্তর করে রেলওয়ে পুলিশ। শনিবার রাতেই মৃত মা ও সন্তানের শবদাহ করা হয়। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানের শেষ কৃত্যে অংশ নেননি স্বামী প্রদীপ সেন। তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কুমিল্লার এক অটো রাইস মিলে চাকুরী করেন তিনি। ছুটি পাননি তাই স্ত্রী সন্তানের শেষ কৃত্যে যোগ দেননি।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে এ ঘটনায় সৈয়দপুর রেলওয়ে জোনে একটি ইউডি মামলা হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের সৈয়দপুর জোনের পুলিশ সুপার সিদ্দিকি তানভিলুর রহমান জানান, ইউডি মামলা হয়েছে। স্বাভাবিক তদন্ত চলছে। রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শ্যামলীবসাকের বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছে রেলওয়ে পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল।
বিডি প্রতিদিন/ ১৪ মে ২০১৭/ ই জাহান