সিরাজগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে যাচাই-বাছাই কমিটিকে টাকা না দেয়ায় ভাতা প্রাপ্তসহ প্রকৃত ১৬ জনকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে না পারায় এসব মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন তাদের কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের শহীদগঞ্জ গ্রামের মকবুল হোসেন, হোসেন আলী, আমজাদ হোসেন, জুলহাস উদ্দিন, জিন্নাহ জয়নাল আবেদীন, আবু বক্কার সিদ্দিক ও আলফাজ আলীসহ ১৬জন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন ও পৌর কমান্ডার আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে রহমতগঞ্জ কবরস্থানে প্রশিক্ষন নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে পাক আর্মি ক্যাম্পে গ্রেনেড ও সাধারন মানুষ যাতে ভয় না পায় সে জন্য লিফলেট ও পোস্টারিং করেছে। এ কাজ করতে গিয়ে আর্মির হাতে ধরা খেয়ে নানাভাবে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। তাদের সাথে বন্দী হওয়ায় রতনগঞ্জ গ্রামের রতনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু রতন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় থাকলেও স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও বাকী ১৬জন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি। যাচাই-বাছাইয়ে সব তথ্য ঠিক থাকলেও টাকা দিতে না পারায় তারা মুক্তিযোদ্ধা হতে পারছেনা বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন। আর টাকা না দেয়ায় ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মকবুলকেও বাদ দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী, আমজাদ হোসেন, জুলহাস উদ্দিন ও জিন্নাহ জয়নাল আবেদীন, আবু বক্কার সিদ্দিক ও আলফাজ আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় শহরের রহমতগঞ্জ কবরস্থানে পৌর কমান্ডার আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে প্রশিক্ষন নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে পোষ্টার-লিফলেট বিতরন করেছি। সম্মুখ যুদ্ধ না করলেও পাকবাহিনীকে আতঙ্কে রাখতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি। কাজগুলো করতে গিয়ে পাক বাহিনীর হাতে ধরা খেয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। দীর্ঘ ২২ দিন ৮জনকে পাকবাহিনী আমাদের নির্মম নির্যাতন করেছে। এবার যাচাই-বাছাই শেষে জেলা কমান্ডার শফি আমাদের কাছে একলক্ষ টাকা দাবী করে। টাকা না দেয়ায় আমাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন জানান, ২০০৫ সাল থেকে ভাতা পেয়েছি। কিন্তু নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ে কমিটিকে টাকা না দেয়ায় আমাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর পৌরসভা কমান্ডার আব্দুর রশিদ জানান, আমাদের নেতৃত্বে যারা যুদ্ধ করেছে-যাচাই বাছাই কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়া হওয়া হয়। ওই সময় কমিটির সবাই স্বীকার করেছিল এরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। মূলত সাক্ষ্য কোন মুখ্য বিষয় ছিল না। মুখ্য ছিল টাকা। টাকা না দেয়ার কারণে এদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর আমার ভাই হামিদ এক লক্ষ টাকা দিয়েছে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী সেখ মো. আলাউদ্দিন জানান, সম্মুখ যুদ্ধ না করলেও এরা ওই সময় প্রশিক্ষন নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছে। পাক বাহিনীর হাতে ধরা খেয়ে নানা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি কমান্ডার থাকাকালে এদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়। এবার কমিটিতে সাক্ষ্য দেয়ার পরই তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পরে শুনেছি প্রতিজনের কাছে এক থেকে দেড় লক্ষ করে টাকা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু দরিদ্র এসব মুক্তিযোদ্ধারা টাকা দিতে না পারায় তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি অবিলম্বে প্রকৃত এসব মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী শফিকুল ইসলাম শফি টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, সুন্দর ও সঠিকভাবে যাচাই-যাছাই করা হয়েছে। তারপরেও হয়ত কিছু ভুল হতে পারে। এ জন্য বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের আপিল করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার