বরিশালের স্কুলগুলোতে আগামী বছর থেকে অর্ধ-বার্ষিক ও বাচনিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষা বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইতিমধ্যে বোর্ডের নিজস্ব ওয়েবসাইটে নোটিশও জারি করা হয়েছে। নোটিশে বোর্ডের আওতাধীন সব স্কুলগুলোকে এক মাসের মধ্যে কম্পিউটার, প্রিন্টারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষা বোর্ড প্রশ্ন সরবরাহ করলে শিক্ষক সমিতি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র বিক্রির লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হবে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সরকার বহু আগে থেকেই বোর্ডকে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষক সমিতিতে থাকা প্রধান শিক্ষকদের কারণে ৮০ ভাগ স্কুলেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র বিক্রি করে শিক্ষক সমিতির তহবিলে বড় অঙ্কের টাকা জমা হতো। জনশ্রুতি রয়েছে ওই টাকার ভাগ পেতেন শিক্ষক সমিতির নেতা থেকে শুরু করে যে স্কুলগুলো প্রশ্ন নিত সেইসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকগণ। এ কারণে নগরীর ৪-৫টি স্কুল বাদে সব স্কুলে শিক্ষক সমিতির প্রশ্ন দিয়ে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছে। আর উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে বেশিরভাগ স্কুলেই শিক্ষক সমিতির প্রশ্নপত্র দিয়ে চলে আসছে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা।
শিক্ষাবিদরা জানান, সৃজনশীল পদ্ধতিতে ক্লাসে যেভাবে পড়ানো হয় সেভাবেই প্রশ্নপত্র করতে হবে। সমিতির প্রশ্ন নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। শিক্ষক সমিতির প্রশ্নপত্র পাঠ্য বইয়ের ধারে কাছেও থাকে না। সাধারণ শিক্ষকরাও এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকরা সমিতির নেতা হওয়ায় স্কুলগুলো প্রশ্ন নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এ অবস্থায় কঠোর অবস্থান নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সব পরীক্ষার প্রশ্ন শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমে প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছর স্কুলগুলোর বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, বাচনিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ডও একই নীতি অনুসরণ করতে যাচ্ছে।
গত ৩ অক্টোবর বরিশাল শিক্ষা বোর্ড তাদের ওয়েবসাইটে একটি নির্দেশনা প্রকাশ করে। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিদের বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ম শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক, ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক ও বাচনিক পরীক্ষার প্রশ্ন অনলাইনে দেয়া হবে। এ জন্য বিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার না থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে এসব উপকরণ কিনে বোর্ডকে অবহিত করতে বলা হয়। যেসব বিদ্যালয় প্রশ্ন ব্যাংকে নিবন্ধন করবে না বা প্রশ্ন আপলোড করবে না তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সিদ্ধান্তে নাখোশ বরিশালের শিক্ষক সমিতি নেতারা। শিক্ষক সমিতির (কামরুজ্জামান) আঞ্চলিক নেতা মোজাম্মেল হোসেন জানান, শিক্ষা বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নযোগ্য নয়। শিক্ষা বোর্ড ইতিপূর্বেও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক জানান, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যেভাবে পড়ানো হয় সেই আলোকেই যাতে তাদের জন্য শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ফলাফলও ভালো হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিডি প্রতিদিন/১৩ অক্টোবর, ২০১৭/ফারজানা