এলাকায় মানুষের কাছে সাহায্য তুলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিবগঞ্জ রামপুর এলাকার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী আশা আক্তার। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পরেও আশার স্বপ্ন কেন জানি মরীচিকায় পরিণত হওয়ার মত! এখন মেডিকেলে পড়াশুনা করার পরবর্তীতে খরচ জোগানো নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন আশার দিনমজুর মা আর্জিনা বেগম।
সদর উপজেলা শিবগঞ্জ রামপুর এলাকার মকশেদ আলী মেয়ে আশা আক্তার। আশার মা আর্জিনা বেগমকে অনেক আগে ছেড়ে চলে যায় তার বাবা মকশেদ আলী। তখন ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় মা আর্জিনা বেগমকে। আর্জিনা বেগম শুরু করেন ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংগ্রামী জীবন। সমাজের মানুষের নানা রকম বিরূপ কথা সহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন তিনি। সারাদিন দিনমজুরের কাজ করে যা উপার্জন হয়, সেই টাকা দিয়ে চলে সংসার ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ।
আর্জিনার ছোট মেয়ে আশা আক্তার। শিবগঞ্জ বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। এরপরে স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে এইচএসসি ভর্তির সুযোগ হয় আশার। অনেক কষ্ট করে পড়াশুনার খবর জোগােতে থাকে আশার মা আর্জিনা বেগম। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করে আশা। মায়ের ইচ্ছে ছিল ছোট মেয়েকে ডাক্তার বানানো। সেই স্বপ্ন নিয়ে সকলের কাছে সহযোগিতা নিয়ে ঢাকায় কোচিংয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয় আশা আক্তারকে।
পরবর্তীতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৭৬ নম্বর মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে আশা। আশার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে খবর শুনে গ্রামের মানুষ আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে। কিন্তু আশার মায়ের মুখে আনন্দের বদলে মেয়েকে ভর্তি নিয়ে হতাশা ফুটে উঠে। পরে এলাকার মানুষের কাছে সাহায্য তুলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় আশাকে।
মেধাবী শিক্ষার্থী আশা আক্তার জানান, আমার মায়ের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় অবশেষে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সকলের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে কিভাবে মেডিকেল কলেজের খরচ চালাবো সেই সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। কারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমার মা। অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত আমাকে নিয়ে এসেছেন।
আশার মা আর্জিনা বেগম বলেন, নিজের ভিটেমাটি কিছুই নেই। তিন মেয়ের মধ্যে আশা সবচেয়ে ছোট। খেয়ে না খেয়ে মেয়েটি স্কুল-কলেজ করেছে। ভালো ফলাফলে এলাকার সবাই সহযোগিতায় মেডিকেলে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখন আশাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। পরবর্তীতে খরচ কিভাবে জোগার করবো ভেবে পাচ্ছি না।
শিবগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদেমুল ইসলাম ও সহকারি শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে মেধাবী ছাত্রী আশা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্ববোধ করছি। ছোট থেকেই স্কুলে আশা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। দরিদ্র হওয়ায় শিক্ষক ও এলাকায় মানুষের সহযোগিতায় আজ এই পর্যন্ত সে। কিন্তু মেডিকেলে পরবর্তীতে খরচ জোগানোর মত আশার মা আর্জিনা বেগমের সামর্থ্য নেই বললেই চলে। দেশের অনেক বিত্তবান ব্যক্তি রয়েছে যারা আশার দায়িত্ব নিয়ে অসহায় মানুষের সেবা করার সুযোগ দিতে পারেন। এলাকার মানুষ এই মেধাবী শিক্ষার্থী আশার লেখাপড়াসহ পরবর্তী সহাযোগিতার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার