মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ ও এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে বাড়ির সকল পুরুষ পলাতক রয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রাম থেকে কাতার প্রবাসী আকামত আলীর স্ত্রী মাজেদা বেগম (২৫), মেয়ে লাবণী বেগম (৭) ও ছেলে ফারুক আহমদের (৪) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ওই বাড়ির ৩ নারীকে জিজ্ঞাসাবদে করছে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার নিহতদের লাশ মাজেদা বেগমের বাবার বাড়ি জেলার কুলাউড়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনও মামলা হয়নি। মা-সন্তানসহ তিনজনের এ মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী।
এলাকার কেউই ঘটনাটিকে স্বাভাবিক মনে করছেন না। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছেন। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি এলাকাবাসীর।
বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সরেজমিনে সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি গ্রামের ওই বাড়িতে দেখা গেছে, বাড়িতে লোকজন নেই। সব ঘর তালাবদ্ধ। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে বাড়িতে ভীড় করছেন। অনেককেই আহাজারি করতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার পর বিকেলে থেকে ওই বাড়ির সকল পুরুষ উধাও হয়ে যান। ওই বাড়িতে আসা গ্রামের পাশের দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা আয়েশা বেগম বলেন, ‘৩টা মুর্দা (লাশ)। ঘটনা হুনিয়া (শুনে) অরঅরি করের (কষ্ট লাগের)। গত রাতে ইন্টারনেটে ভিডিও দেখছি। ভিডিওতে দেখছি মহিলার পাও (পা) মাটিতে লাগাইল (লাগানো)। এক হুরুত্বা (সন্তান) মাটিত পালাইল (পড়ে) আছে। তাই দেখতে আইছি। ইটা আত্মহত্যা মনে ওর না।’ একইরকম কথা জানালেন এলাকার বাসিন্দা ছায়াদ আহমদও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাতার প্রবাসী আকামত আলীর স্ত্রী বসত বাড়ীর প্রায় ১০০ গজ দূরে মিস্ত্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করাচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি মিস্ত্রীদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। মঙ্গলবারও তিনি বসত ঘর ও নির্মাণাধীন স্থানে যাওয়া আসা করেন।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মিস্ত্রী সিমেন্টে নিতে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করে। দীর্ঘক্ষণ সাড়া না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে মাজেদাসহ মেয়েকে ঝুলন্ত দেখে লোকজনকে জানায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহ জালাল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) আবু ইউছুফ, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বড়লেখা থানার অপারেশন অফিসার অমিতাভ দাস তালুকদার বুধবার বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। ওই বাড়ির তিনজন নারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনাটি রহস্যজনক। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
বিডিপ্রতিদিন/ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান