নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২০১৭ সালে দায়ের করা কিশোরী মুনমুন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার পলাতক এক আসামি রাহুলকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়েছে। সে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন চৌরাপাড়া এলাকার হুমায়ূন কবিরের ছেলে। রাহুলকে গ্রেফতারের কারণে এই মামলার সব আসামিকেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলো বলে দাবি করেছেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম জানান, মুনমুন গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার মোট আসামি ৪ জনের মধ্যে ৩ ঘটনার পরপরই গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে থেকে নেছার আলী নামে একজন আদালতে দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি প্রদান করে। ইতোমধ্যে ওই মামলার চার্জশীটও দেয়া হয়েছে আদালতে। ৩ জন আসামিকে আটক করা হলেও রাহুল দীর্ঘদিন পলাতক ছিলো। আজ দুপুরে গোপন সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এই মামলার পলাতক আসামী জেলার রাহুল বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় অবস্থান করছে। পরে বন্দর থানা পুলিশের সহযোগীতায় আসামী রাহুলকে আমরা গ্রেফতার করি। রাহুলকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এই মামলার সব আসামিকেই আইনের আওতায় আনা হল।
উল্লেখ্য, বন্দর চৌড়াপাড়া এলাকার মানসিক প্রতিবন্ধী মুনমুনের সাথে একই এলাকার মিন্টু মিয়ার ছেলে রাসেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মুনমুন রাসেলকে প্রায়ই বিয়ের কথা বলতো। কিন্তু রাসেল মুনমুনকে বিয়ে করতে চাইতো না। মুনমুন বেশ কয়েকবার রাসেলকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। এতে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে হয়ে ওঠে এবং মুনমুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাসেলের বন্ধু নেছারের মাধ্যমে মুনমুনকে চিত্তরঞ্জন ঘাটে নিয়ে আসে। ঘাটে আগে থেকেই রাসেল, সাইফুল এবং রাহুল উপস্থিত ছিল। পরে তারা একটি নৌকা ভাড়া করে নদীতে ঘুরতে যায়। নৌকায় রাসেল, নেছার,সাইফু ও রাহুল মুনমুনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে মুনমুন অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তারা মুনমুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। ঘটনার পরদিন ১৮ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় গত বছরের ১৮ এপ্রিল পুলিশ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলার আসামীরা হলো বন্দর চৌড়াপাড়া এলাকার মৃত মহিউদ্দিন ওরফে মফিজের ছেলে নেছার আলী (৫২),আরামবাগ এলাকার মৃত হোসেন প্রধানের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (২২), চৌরাপাড়া এলাকার মিন্টুর ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২০) এবং হুমায়ূন কবিরের ছেলে রাহুল (২৪)।
রাহুল গ্রেফতার হওয়ার পর নিহত মুনমুনের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা তার মেয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছেন। আদালত যেন সুষ্ঠু বিচার করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে। এদিকে নিহত মুনমুনের মা সাথী গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃত আসামী রাহুলের বাবা হুমায়ূন তাদেরকে বিভিন্নরকম হুমকি-ধমকি প্রদান করছেন। এতে করে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার