দিনাজপুর জেলা থেকে এবারের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৫ জন সরকারি চাকুরি প্রার্থীর বাসায় ফুল ও মিষ্টি পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে দিনাজপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশ সুপারের এমন উদ্যোগ উত্তীর্ণ চাকুরি প্রার্থীদের মধ্যে পুলিশ ভেরিভেকিশন নিয়ে থাকা আতঙ্ক আর উৎকন্ঠাকে ছাপিয়ে সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো।
দিনাজপুর পুলিশের এ অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়েছেন তাঁরা।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মালদহ গ্রামের অটোবাইক চালক বাবলু মিয়ার বড় ছেলে সাজু মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এবার বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এতে সাজু মিয়ার পুরো পরিবারসহ গ্রামের সকলেই খুশি। কিন্তু সকল খুশিকে ছাপিয়ে গত সোমবার পর্যন্ত একটি অজানা আতঙ্ক আঁকড়ে ধরে ছিলো বাবলু মিয়ার পুরো পরিবারকে। সেটি পুলিশ ভেরিভেকিশনের আতঙ্ক।
সাজু মিয়া গত সোমবার মুঠোফোনে জানান, তাঁর অনেক বন্ধু বিসিএসে
উত্তীর্ণ হয়েও অজানা কারণে পুলিশ ভেরিভিকেশনের বিরূপ প্রতিবেদন যাওয়ায়
কাঙ্খিত চাকুরিতে যোগদান করতে পারেননি। অাবার অনেকেই পুলিশকে খুশি করে নিতে হয়েছে ভেরিভিকেশন। তাই কেমন করে পার করবেন এ যাত্রা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন সাজু মিয়াসহ পুরো পরিবার।
কিন্তু গত সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে বিরামপুর
সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান ফুলের তোড়া এবং মিষ্টি নিয়ে হাজির হন সাজু মিয়ার বাসায়।
একজন গর্বিত সন্তানের পিতা মাতাকে জানান ফুলেল শুভেচ্ছা। নিজ হাতে সকলকে খাইয়ে দেন মিষ্টি। পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে ফুল নিয়ে মিষ্টি খাবার সময় সাজু মিয়ার মা সাহেরা বেগম, নানী ময়না বেওয়া আর চাচা এনামুল হকের দু চোখ বেয়ে ঝড়ছিলো অশ্রুধারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে সাজু মিয়ার মা সাহেরা বেগম কাপা কাপা গলায় বলেন, “ বা পুলিশোক তো সবাই ভয় পায়। হারা গরিব মানুষ। হারা তো এনা বেশি ভয়ে আছোনো বা। তোরা জি হামাক মিষ্টি খিলবা আসবেন হারা তো স্বপ্নেও ভাববা পারোছোনা ।”
চাচা এনামুল হক জানান, পুলিশ ভেরিভিকেশন কিভাবে পার করবেন এ নিয়ে তাঁর সকলেই চিন্তিত ছিলেন। তাঁদের সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন পুলিশ ভেরিভিকেশনের কারনে ধুলিসাৎ হয়ে যাবে কি না এনিয়ে সকলেই দিশেহারা ছিলেন।
সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মো. জামিল আকতার জানিয়েছেন শুধু সাজু মিয়ার পরিবার নয় দিনাজপুর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় পুরো জেলায় বিসিএস উত্তীর্ণ ৩৫ জনের পরিবারকে ফুলদিয়ে বরণ করে মিষ্টি উপহার দেওয়া হয়েছে।
তথ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন বিরামপুররের চক হরিদাসপুর গ্রামের আব্দুল
খালেক। তাঁর পরিবারও ছিলেন উৎকন্ঠায়। গত রাতে পুলিশ গিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে মিষ্টি উপহার দেওয়ায় অভিভূত হয়ে পড়েন পুরো পরিবার।
আব্দুল খালেকের বড় ভাই চকহরিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, পুলিশ ভেরিভিকেশনটি কিভাবে পার করবেন এ নিয়ে তাঁরাও কয়েকদিন থেকে উৎকন্ঠায় ছিলেন। পুলিশে যে পরিবর্তনের সু বাতাস বইছে তার প্রমাণ এ ধরনের উদ্যোগ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম হাফিজুর রহমান জানান, মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ভীতি দূর করে সহযোগিতার বন্ধন গড়ে তুলতে বর্তমান পুলিশ
বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে পুলিশ নিয়ে জনগণের মধ্যে কোন ধরনের ভীতি থাকবেনা।
পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, পুলিশ এখন জনবান্ধব সেবা দানকারী কর্মী বাহিনী। মানুষের মধ্যে সেই বার্তা পৌছে দিতেই এ উদ্যোগ।
বিডিপ্রতিদিন/ ২৪ জানুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান