নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে ‘গ্রামীণ যাত্রাপালা ও ইনডোর গেম’র নামে চলছে রমরমা জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গান। জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে বড়াইগ্রামসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজার-হাজার মানুষ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হলেও তারা নীরব রয়েছেন। উচ্চ আদালতের হুকুম থাকায় তাদের এই নীরবতা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মাইকের তীব্র শব্দে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও পড়েছে বিপাকে।
জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে ইনডোর গেম ও গ্রামীণ যাত্রাপালার হুকুম নিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নামে বসানো হয়ে জুয়া ও অশ্লীল নাচের উন্নয়ন মেলা। বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়র এলাকার জনৈক এনামুল হক এই মেলার আয়োজক। ইনডোর গেমের অনুমতি থাকলেও তিনি র্যাফেল ড্র-এর নামে শতাধিক ভ্যান, অটোরিক্স্রায় মাইক টানিয়ে লোভনীয় উপহারের ঘোষণা দিয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০ টাকা করে র্যাফেল ড্রয়ের নামে জুয়ার টিকিট বিক্রি করছেন। লটারি বিক্রি উপজেলার সীমা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার, ঈশ্বরদী, চাটমোহর উপজেলায় পৌছে গেছে। র্যাফেল ড্রয়ের নামে এই জুয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় হাউজি খেলা। এসব জুয়ার আসর শেষে রাত বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় ডাব্বু, তাসসহ বিভিন্ন প্রকার জুয়ার আসর। এছাড়া রাত ১২টার পরে শুরু হয় গ্রামীণ যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নাচ। প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও উঠতি বয়সের যুবক ও তরুণরা এই অশ্লীল নাচের দর্শক।
কালিকাপুর এলাকার ভ্যান চালক আসাদ মিয়া বলেন, সরাদিন ভ্যান চালিয়ে ২০০ টাকা পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ১০টা টিকেট কিনে যদি একটি মোটরসাইকেল পাই তাহলে মন্দ কী! কিন্তু ফলাফল শূন্য, বাড়ির জন্য চাল-ডালও কেনা হলো না। আমার মতো খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণির মানুষই বেশি কিনছে লটারি। কিছুই না পেয়ে সারাদিনের পরিশ্রমের অর্থ মেলায় দিয়ে শুন্য হাতে বাড়ি যেতে হচ্ছে। বাড়ির মহিলারাও ঘরে বসে এসব টিকি কিনছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, মেলার মাইকের কারণে সে মোটেও পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। ফলে সামনে তার ফলাফল খারাপ হয়ে যাবে।
মেলার আয়োজক এনামুল হক দাম্ভিকতার সাথে বলেন, সাংবাদিকের চোখে সবই অবৈধ। তারা ভালো কিছুই দেখতে পায় না। উচ্চ আদালতের হুকুম নিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে, এটা চলবে। কেউ ক্ষমতা দেখালে আদালতে গিয়ে দেখাতে পারেন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান বলেন, মেলার আয়োজকের পক্ষ থেকে আমাদের হাতে উচ্চ আদালতের অর্ডারের কপি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে অসহায়। আরও কিছু জানতে চাইলে আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন বলে তিনি জানান।
বড়াইগ্রামের ইউএনও আনোয়ার পারভেজের সাথে কথা বলতে গেলে তিনিও প্রায় একই সুরে বলেন, আদালতের নির্দেশে র্যাফেল ড্রসহ মেলার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খেটে খাওয়া সাধারণ ও সচেতন মানুষ দ্রুত মেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার