মাত্র ৩ জন বনরক্ষী পাহারা দিচ্ছেন ১৭ বর্গ কিলোমটার সুন্দরবন। তাও বনরক্ষীরা আবার পোশাক ও লাঠি নির্ভর। এই প্রহরীদের হাতে কোন অস্ত্র থাকে না। বনবিভাগের পোশাক আর লাঠিই তাদের সম্বল। বনের মধ্যে বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোন খবর পেলে তারা ছুটে যান লাঠি হাতে নিয়ে!
এটা পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী টহল ফাঁড়ির বর্তমান দৃশ্য নয়, বেশ পুরনো দৃশ্য। দাপ্তরিক প্রয়োজনে স্টেশন কর্মকর্তা বাইরে থাকলে মাত্র ২ জন বনরক্ষী অবস্থান করেন এই ফাঁড়িটিতে।
গুলিশাখালী ফাঁড়ি এসও মো. মনিরুল হক ও সহকারী ফরেস্টার মো. কালু মিয়া জানান, এই ফাঁড়ির আওতায় ১৭ বর্গ কিলোমিটার সুন্দরবন। এই এলাকায় ৩টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। এ ছাড়াও শতশত হরিণ, বানর, শুকরসহ নানা ধরণের বন্য প্রাণীর বসবাস এখানে।
এসব হিংস্র ও প্রাণঘাতি পশুর মোকাবেলা কীভাবে করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তারা বলেন, স্টেশনের কাছেই ৬/৭জন ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্য আছেন। তাদেরকে সাথে নিয়ে বনে প্রবেশ করি।
এই ভিটিআরটি সদস্যদের বিষয়ে বনবিভাগ বা সরকারের কতটুকু দায় দায়িত্ব রয়েছে তা জানতে চাইলে, কালু মিয়া বলেন, না না। কারো কোনই দায় নেই। ওনা রা স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কোন পারিশ্রমিকও তাদের জন্য নেই।
এ সম্পর্কে গুলিশাখালী গ্রামের ভিটিআরটি সদস্য আব্দুল বারেক হাওলাদার (৫০) বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা নদীর ওপর আমাদের বসবাস। বনের সাথে আত্মিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। বনরক্ষীদের ডাকে সন্তান, সংসার ও জীবনের মায়া ত্যাগ করে লাঠি হাতে নিয়ে ছুটে যাই। বাঘ নিয়ন্ত্রণ করি। বাঘের আক্রমণ থেকে মানুষ ও গবাদি পশু বাঁচানোর চেষ্টা করি। গত ২৩ জানুয়ারি লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়ে ভিটিআরটি সদস্য মজিবর রহমান গুরুতর জখম হয়েছেন। এখন টাকার অভাবে তার চিকিৎসা চলছে না।
গুলিশাখালী টহল ফাঁড়িটির এই জনবল সংকট সম্পর্কে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, গোটা বনবিভাগেই জনবল সংকট। তাছাড়া এখন আবার পর্যটক মৌসুম হওয়ায় টুরিস্ট স্পটগুলোয় জনবল বেশি রাখা হয়েছে। তবে শীঘ্রই ওই ফাঁড়িটিতে জনবল বাড়ানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/২৬ জানুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা