নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাস মোড়ে আয়োজিত লটারির ফাঁদে পড়েছে সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার লাখ লাখ মানুষ। বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগঞ্জে 'দৈনিক র্যাফেল ড্র' নামে জুয়ার ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আয়োজকরা প্রতিদিন প্রায় হাতিয়ে নিচ্ছে অর্ধকোটি টাকা।
বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এক মাস আগে গ্রামীণ পল্লী মেলার নামে জুয়ার আসর বসানোর হয়েছিল । একমাস বিরতির পরে পুনরায় শুরু হয় বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রেসক্লাবের উন্নয়ন কল্পে স্বাধীনতা দিবসের মেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর। গভীর রাতে নগ্ননৃত্য ও হাউজি নামের জুয়ার আসর। এতে সর্বশান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলে ও স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ওই নগ্ননৃত্য দেখে তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটছে। যার ফলে এলাকায় যৌন হয়রানিরমত অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আদালত থেকে নিয়ে আসা ইনডোর গেমের নামে চলছে রমরমা জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গান। অতি লোভে জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ। এছাড়াও যাত্রা ও অশ্লীল গান চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বড় বড় মাইক। এতে করে মাইকের তীব্র শব্দে আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ মার্চ রাতে দৈনিক স্বপ্নপূরী র্যাফেল ড্রর নামে টিকিট বিক্রির অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় আয়োজকরা।
প্রশাসনের নাগের ডগায় বসে এমন কর্মকাণ্ড চালালেও প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকায় তাদের এই নিরবতা বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এই ইনডোর গেমের নামে চলছে এই রমরমা জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গানের আসর। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে স্থানীয়রা মেলা বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে ইনডোর গেম ও গ্রামীণ যাত্রা পালার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আর এই অনুমতির বলে তিনি র্যাফেল ড্র-এর নামে শতাধিক ভ্যান, অটোরিকশায় মাইক টাঙিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে লোভনীয় উপহারের ঘোষণা দিয়ে ২০ টাকা করে প্রতিটি টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। লটারি বিক্রি উপজেলার সীমা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার, ঈশ্বরদী, চাটমোহর উপজেলায় পৌঁছে গেছে।
শুধু তাই নয় এই অনুমতির বলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মেলার প্যান্ডেলে হাউজি খেলা শুরু হয়। এছাড়াও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ডাব্বু, তাসসহ বিভিন্ন প্রকার জুয়ার আসর। রাত ১২টার পরে চলতে থাকে গ্রামীণ যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য। এসব দেখেও স্থানীয় প্রশাসন না দেখার ভান করে থাকছে। ফলে জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ।
এর ফলে এলাকায় ছিচকে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাতের অন্ধকারেই নয় এখন দিনে দুপুরেও এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও যাত্রা ও অশ্লীল গান চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বড় বড় মাইক।এতে করে মাইকের তীব্র শব্দে আগামী আগামী ২ এপ্রিল থেকে শুরু এসএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে।
উপজেলার কালিকাপুর এলাকার ভ্যানচালক নবীর উদ্দীন জানান, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে মাত্র দুইশ টাকা রোজগার করেছিলেন তিনি। তিনি ভেবেছিলেন ১০টা টিকিট কিনে যদি একটি মোটরসাইকেল পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কি। এই ভেবেই তিনি তার রোজগারের দুইশ টাকা দিয়ে ১০টি লটারির টিকিট কিনে মেলার মাঠেই বসে থাকেন লটারি ড্র হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু ফলাফল শূন্য, একটি টিকিটেও তার মোটরসাইকেলের নম্বর ওঠেনি।এদিকে সারাদিনের রোজগারের অর্থ দিয়ে টিকিট কিনার ফলে পরিবারের সদস্যদের জন্য চাল-ডালও কেনা হলো না তার।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কাদের মিয়া জানান, তার কাছে কাজ করা শ্রমিকরা সন্ধ্যার পর আর দোকানে কাজ করতে চায় না। কোন রকমে তাদের আটকিয়ে রাখলেও দোকান বন্ধের পর তারা চলে যায় জুয়ার মাঠে। সারাদিনের আয় রোজগার সব ঢেলে দিয়ে আসে জুয়ার পেছনে। তাদের মতো খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণীর মানুষই বেশি কিনছে লটারি। কিছুই না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, মেলার মাইকের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় রাতের বেলা এমন শব্দের কারণে কেউ সঠিকভাবে ঘুমাতেও পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়বেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে মেলার আয়োজক স্বাধীনতা উদযাপন মেলার পরিচালক জাঙ্গাঙ্গীর হোসেন ভূইয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, সাংবাদিকের চোখে সবই অবৈধ। তারা ভালো কিছুই দেখতে পায় না। উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে, এটা চলবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান বলেন, মেলার আয়োজকের পক্ষ থেকে তাদের হাতে উচ্চ আদালতের অর্ডারের কপি দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, তারা এ বিষয়ে অসহায়। আরো কিছু জানতে চাইলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান।
মেলার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বড়াইগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, আদালতের আদেশ থাকায় তারা এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছেন না।
বিডি প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর