মাদারীপুরে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতই কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকায় সার কিনতে বাধ্য করছে। সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া আছে। ওইসব ডিলারের স্ব স্ব ইউনিয়নেরই ব্যবসা পরিচালনা করার শর্তে তাদের ডিলারশিপ দেয়া হয়েছে। অথচ পৌরসভার মধ্যেই অধিকাংশ সার ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
এছাড়াও সরকার নির্ধারিত ন্যায্য মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করায় সার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষকরা। সার ডিলারদের সিন্ডিকেটের ফলে চড়া দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। এতে অনেকটাই স্থানীয় পাইকারী ও খুচরা সার বিক্রেতাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে প্রান্তিক চাষি। উঠতি ইবি-বোরো মৌসুমে অধিক মূল্যে সার কেনার ফলে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা জেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষকের। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মাদারীপুর পুরান বাজারে রয়েছে একাধিক ইউনিয়নের সারের ডিলার। এছাড়াও শহরের চরমুগরিয়া এলাকায় একই গোডাউনে পরিচালিত হচ্ছে দুটি ইউনিয়নের সার ডিলারের ব্যবসা। অথচ ওই ডিলারদের সদর উপজেলার পেয়ারপুর ও দুধখালি নিজ ইউনিয়নে গোডাউনে রেখে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সার বিক্রির কথা রয়েছে। যা কাগজে-কলমে থাকলেও এসব ইউনিয়নের কৃষক যানবাহন খরচ আর অধিক মূল্যের জন্যে এলাকার পাইকার ও খুচরা দোকান থেকে অধিক মূল্যে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
পাঁচখোলা ইউনিয়নের কৃষক রাজ্জাক তায়ানী বলেন, আমাদের এলাকায় সারের কোন ডিলার আছে কিনা আমার জানা নেই। আমরা শহরের গোডাউন থেকে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছি। যদি আমাদের এলাকায় সার বিক্রি করতো, তাহলে আমাদের পরিবহন খরচ কম হতো এবং আমাদের বাজারে গিয়ে সময়ও নষ্ট করতে হতো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি দাবি করেছেন মাদারীপুরের সব কৃষক।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জিএসএ গফুর বলেন, এই জেলায় ৬৩ জন মূল ডিলারের মাধ্যমে ৫৬৭ জন সাব ডিলার প্রান্তিক কৃষকদের সার ও বীজ দেয়ার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে। যারা কৃষকদের হাতের নাগালে সার ও বীজ পৌঁছে দেবে। যদি কেউ অনিয়ম করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চড়া দামে সার বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে তারা জানান, যানবাহনের অধিক খরচের কারণে শহরের গোডাউন রেখে সার ও বীজ বিক্রি করছে।
কৃষি অফিস জানিয়েছেন, মাদারীপুরে এ বছর ইউরিয়া ১৯,৯২৬ মেক্ট্রিক টন, টিএসপি ৬,৮২৮ মেক্ট্রিক টন, ডিএফপি ৮,২৮৫ মেক্ট্রিক টন, এসওপি ৮,৫৩৫ মেক্ট্রিক টন বরাদ্দ পেয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার ইরি-বোরো বেশি আবাদ হওয়ায় সারের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু ডিলারদের অনিয়ম নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি কর্মকর্তারা।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. ওহিদুল ইসলাম বলেন, ডিলারদের এসব অবৈধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব ডিলাররা শহরে ব্যবসা করছে তাদের স্ব স্ব ইউনিয়নের গিয়ে ব্যবসা পচিালনা করতে বাধ্য করা হবে। এছাড়াও যারা অধিক মূল্যে সার বিক্রি করার প্রমাণ পেলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন