প্রতি বছরের মতো এবারো নববর্ষ উপলক্ষে পঞ্চগড়ের ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা বসেছে। এদিকে সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ঐতিহাসিক নাওঘাটায় সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইউনিয়নবাসী।
দুই সীমান্তের কাঁটাতারের এপার-ওপারে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কয়েক মুহূর্ত সময় কাটানো আর সুখ-দুঃখের খবর নেয়ার জন্য লাখো মানুষ ছুটে এসেছে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্তে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এই মিলনের কথা থাকলেও ভোর বেলা থেকে ছুটে আসতে থাকেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ আগের দিন এসে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অপেক্ষা করছেন। এই অপেক্ষার চোখগুলোতে ভাসতে থাকে অনেকদিন আগে চলে যাওয়া নিজের আত্মীয়-স্বজনের মুখ। সকাল সাড়ে দশটায় এক পলক দেখা করার অনুমতি মেলে তাদের। হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবাই। স্বজনকে খুঁজতে থাকেন তারা। এর আগে ঐতিহাসিক নাওঘাটা সীমান্তে সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করে অমরখানা ইউনিয়নবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নাওঘাটা সীমান্তে পাকিস্তান আমল থেকে মিলনমেলা বসছে।এই এলাকার লাখো মানুষের স্বজন ওপার বাংলায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধারণ মানুষ তাদের স্বজনদের সাথে এক পলক দেখা করার জন্য এখানে ছুটে আসেন। তাই এই সীমান্তে একটি সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠিত হলে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সুসম্পর্ক স্থাপন হবে। মানববন্ধনে কয়েকশ' মানুষ অংশ নেয়।
এদিকে মিলনমেলায় প্রিয় স্বজনদের সাথে এক পলক দেখা করতে সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে লাখো মানুষের ঢল নামে। মুহূর্তে ওই সীমান্ত দুই বাংলার মহামিলন মেলায় পরিণত হয়। স্বজনদের সাথে দেখা করতে আসা সাধারণ মানুষের দাবি পঞ্চগড়ের সীমান্তে একটি সীমান্ত হাট স্থাপনের।
আটোয়ারী উপজেলার নয়নব্রুজ এলাকার সুমিতা রানী চোখের পানি মুছতে মুছতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাবা-মাসহ আরও অনেকে ভারতের জলপাইগুড়ির চাউলহাটি এলাকায় থাকেন। এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এই দিনে আমার বাবা-মাকে একপলক দেখতে পাই। এখানে যদি একটি সীমান্ত হাট হয় তবে প্রায়ই বাবা মার সাথে দেখা করতে পারবো। টাকা পয়সাতো নেই যে পাসপোর্ট ভিসা করে যাবো।
এ সময় কাঁটা তারের বেড়ার ফাঁকা দিয়েই প্রিয় স্বজনদের এক পলক দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। পুড়ো সীমান্তে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ স্বজনদের হাত ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ স্বজনদের জন্য আনা উপহার সামগ্রী বিনিময় করে। আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও মিলনমেলার মহোৎসব দেখতে আসে তরুণ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাও। অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, ঐতিহাসিক নাওঘাটায় একটি সীমান্ত হাট জরুরি। হাটটি স্থাপন হলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
বিজিবি সূত্র জানা যায়, ৪৭-এ পাক-ভারত বিভক্তির পূর্বে পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল। পাক-ভারত বিভক্তির পর এসব এলাকা বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্ত হয়। দেশ বিভক্তের কারণে উভয় দেশের নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দুই দেশের নাগরিকরা তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেলেও ভারত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় কয়েকযুগ ধরে বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় অমরখানা সীমান্তের নাওঘাটা এলাকায় দুই বাংলার মিলনমেলা বসছে। এছাড়া মাগুড়মারি, ভূতিপকুর ও শুকানী সীমান্তেও এই মিলনমেলা বসে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক কাজী আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক যুগ ধরে এই মিলনমেলা বসছে। আমরা জেনেছি এই এলাকার মানুষ নাওঘাটায় একটি সীমান্ত হাট দাবি করেছে। তাদের দাবি যৌক্তিকতা বিবেচনা করে আমরা উপরের চ্যানেলে কথা বলবো এবং দ্রুত একটি সীমান্ত হাট স্থাপনের চেষ্টা চালাবো।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ এপ্রিল, ২০১৮/মাহবুব