চলতি মৌসুমে বগুড়ার জেলায় সবুজ ক্ষেতে বোরো ধানের শীষ দেখে হাসিতে ভরে ওঠেছিল কৃষকের মুখ। কিন্তু সেই হাসিমাখা মুখ এখন মলিন হয়ে যাচ্ছে। ফসল হারিয়ে কাঁদছেন কৃষকরা। মাঠের পর মাঠ পচন ধরে পুড়েছে ক্ষেত, এতে কপালও পুড়েছে কৃষকের।
বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষেতে রোগের বিস্তার, ওষুধ কাজ না করায় চাষিরা এবার ধান কাটতে পারবেন না। কারণ ক্ষেতে শীষ পুড়ে গেছে, চাষের খরচ না ওঠার পাশাপাশি খাবার ধানটুকুও পাবে না। পাকার আগেই ক্ষেতের পর ক্ষেত লালচে রঙ ধারণ করেছে ধানের শীষ। আক্রান্ত ক্ষেতে ধানের শীষে চালের অবশিষ্ট টুকুও নেই। ধানের এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।
বগুড়া জেলার ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, দুপঁচাচিয়া, শাজাহানপুর কিছু কিছু এলাকায় ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাস্ট (বিএলবি) রোগ বাংলায় যাকে বলা হয় 'পাতাপোড়া' রোগে আক্রান্ত হয়েছে ধান ক্ষেত।
ধুনট উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট (বিএলবি) রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব জমির ধান গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ এলাকার বোরো ধানের মাথায় শিষ বের হচ্ছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেতের ধানগাছের পাতা শুকিয়ে খড় হয়ে গেছে। ওই সব গাছের মাথায় বের হওয়া শীষও শুকিয়ে খড়ের মতো বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এটাকে পাতাপোড়া রোগ বলে। এই রোগ এক জমি থেকে অন্য জমিতে এবং মাঠে-মাঠে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রথম দিকে ধানগাছের পাতা পুড়ে বিবর্ণ হয়। এরপর ধীরে ধীরে শীষ ও ধানগাছের গোড়ার দিক আক্রান্ত হয়। এভাবেই ধানগাছের পাতা পুড়ে শীষে থাকা ধান চিটা হয়ে যায়।
ধুনট উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বলেন, প্রায় ৩শ হেক্টর জমির ধান ক্ষেত পাতাপোড়া রোগে আক্রান্ত হবার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধানগাছের মাথা ছিঁড়ে যায়। বড় ধরনের আঘাতের কারণে ধানগাছের পাতা ও শীষের ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমির ধানগাছ ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট (বিএলবি) রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে ধানের ফলন অনেকটাই বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। এই রোগ দমনে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাবতলী উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা সোহেল শামস উদ্দিন ফিরোজ জানান, পাতাপোড়া রোগ সম্পর্কে কৃষকদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল এবং ছত্রাকনাশক ঔষধ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যারা জমিতে ছত্রাকনাশক ঔষধ ব্যবহার করেছে তাদের জমির ফসল ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়নি। অপরদিকে, সারিয়াকান্দি কৃষি অফিস থেকেও কৃষকদের এ রোগ থেকে উদ্ধারের জন্য সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার