বাগেরহাটের মোংলা বন্দর চ্যানেলের পশুর নদীর হারবাড়িয়ায় সুন্দরবনের মধ্যে ৭৫০ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই একটি লাইটার জাহাজ (এমভি বিলাস) ডুবে গেছে। রবিবার ভোরে এই জাহাজ ডুবির পর সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি। তবে দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদীর ডুবে যাওয়া স্থানে ডুবুরী নামিয়ে জাহাজটিতে ‘মার্কিং বয়া’ স্থাপন করেছে। এখন এই মাকিং বয়ার কারণে মোংলা বন্দরে আসা দেশী-বিদেশী জাহাজগুলো দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলাচল করতে পারছে।
ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজটি ভাটার সময় জাহাজটির মাষ্টার ব্রিজের আশিংক দেখা গেলেও জোয়ারের সময় জাহাজটি পুরোপুরি তলিয়ে থাকছে। বন্দরের পশুর চ্যানেল থেকে ডুবে যাওয়া জাহাজটি দ্রুত উদ্ধারে মালিক পক্ষকে নিদের্শ দিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর চ্যানেলে কয়লাবোজাই লাইটার ডুবির পর বন্দরের কার্যক্রম ও চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে মোংলা বন্দর। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শাহিন কবিরকে সংরক্ষিত এই বনের পশুর নদীতে কয়লাবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবিতে কি পরিমান ক্ষয়খতি হবে তা নিরুপন করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদ হাসান। এদিকে এই কয়লাবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের গাছের শ্বাসমূলসহ জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা প্রকাশ করছে পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো।
ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের ড্রাইভার আনিছুল হক মুঠোফোনে জানান, মোংলা বন্দরের সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকার ৬ নম্বর এ্যাংকোরেজে থাকা লাইবেরিযার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি অভজারভার ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই করে মোংলা বন্দরে আসে। রবিবার ভোরে ওই জাহাজ থেকে খুলনার দুলাল এন্টারপ্রাইজ ইটভাটা ও সিরামিক কারখানাগুলোর জন্য আমদানী করে। জাহাজ থেকে আমদানীকৃত কয়লা বোঝাই করে লাইটার জাহাজ বিলাস ঢাকা মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ছেড়ে আসার পর কিছু দূর এগোলেই ডুবোচরে ধাক্কা লেগে জাহাজটির তলা ফেটে ডুবে যায়। এ সময় লাইটার জাহাজটিতে থাকা ৭ কর্মচারীর সকলে সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হয়। ডুবে যাওয়া এই লাইটার কার্গো জাহাজটি ঢাকার ইস্টার্ন ক্যারিয়ার নেভিগেশনের মালিক মো. সোহেল আহম্মদ। লাইটার জাহাজের ড্রাইভার আনিছুল হক পশুর চ্যানেলে জাহাজ ডুবির ঘটনায় রবিবার দুপুরে মোংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার ওলিইল্লাহ জানান, রবিবার দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদীর তুবে যাওয়া স্থানে ডুবুরী নামিয়ে জাহাজটিতে ‘মার্কিং বয়া’ স্থাপন করেছে। এখন এই মাকিং বয়ার কারনে মোংলা বন্দরে আসা দেশী-বিদেশী জাহাজগুলো দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলাচল করতে পারছে। মোংলা বন্দর চ্যানেলে কয়লাবোঝাই লাইটার ডুবির পর বন্দরের কার্যক্রম ও চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকার ইস্টার্ন ক্যারিয়ার নেভিগেশনের মালিক মো. সোহেল আহম্মদকে তার ডুবে যাওয়া লাইটার কার্গো এমভি বিলাসকে দ্রুত বন্দরের পশুর চ্যানেল থেকে কয়লাসহ উদ্ধারে দুপুরে চিঠি দেয়া হয়েছে। মালিক পক্ষ কয়লাসহ লাইটার জাহাজটি উদ্ধারে ব্যর্থ হলে বন্দরের নিয়মানুযায়ী নিলাম ডেকে টেন্ডারের মাধ্যমে উত্তোলন করা হবে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদ হাসান জানান, কয়লাবোঝাই এই লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের কি পরিমান ক্ষয়খতি হবে তা নিরুপণ করতে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. শাহিন কবিরকে কয়লাবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবিতে সুন্দরবনের কি পরিমান ক্ষয়খতি হবে তা নিরুপন করে দ্রুত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর থেকেই এই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
বিডি প্রতিদিন/১৫ এপ্রিল ২০১৮/হিমেল