আইনি লড়াইয়ের পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে চার বছর এক মাস ২৪ দিন পর ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী ধর্মান্তরিত লীপা রাণী রায় ওরফে হোসনে আরার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার বিকাল তিনটার দিকে নীলফামারী ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের পূর্ববোড়াগাড়ি গ্রামে স্বামী হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, ডোমার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইব্রাহিম খলিল।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে শুক্রবার সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে জহরুল ইসলাম লাশ গ্রহন করেন। এরপর দাফন সম্পন্ন হয়।’
লীপা রাণী রায়ের আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ। ঘটনাটি ছিল ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বামুনিয়া গ্রামের। মৃত্যুর পর লীপার বাবা অক্ষয় কুমার রায় এবং শ্বশুর পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব বোড়াগাড়ি গ্রামের জহুরুল ইসলাম লাশের দাবি করলে মামলা গড়ায় আদালতে। এমন জটিলতায় ওই মৃতদেহটি রাখা হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে। চার বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গত ১২ এপ্রিল উচ্চ আদালতের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ ওই মৃতদেহটি ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফনে নির্দেশ দেন।
সূত্রমতে, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর কলেজছাত্রী লীপা রাণী রায়ের (১৮) সঙ্গে হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর (২৩) প্রেমের সর্ম্পক ধরে বিয়ে হয়। লিপা রানী রায় এসময় হোসনে আরা নামে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এঘটনার তিন দিন পর (২৮ অক্টোবর) লীপা রাণী রায়ের বাবা বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় হুমায়ুন ফরিদ লাইজুর জামিন মঞ্জুর করে লীপা রাণী রায়কে সেফ হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক। ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারী হুমায়ুন ফরিদ লাইজু (লীপার স্বামী) কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন। অপরদিকে ১৬ জানুয়ারী মামলার বাদি অক্ষয় কুমার রায় তার মেয়ে লীপাকে আদলতের জামিনে হেফাজতে নিয়ে নিজ বাড়ি নেন। সেখানে অবস্থানকালে ৫৪ দিন পর ১০ মার্চ (ওই বছরের) কাটনাশক পানে আত্মহত্যা করে লীপা। এরপর দুই ধর্মের দুই পরিবারের মধ্যে লাশের দাবিতে মামলা গড়ায় আদালতে।
ওই মামলায় প্রথম ধাপের রায় গড়ায় জহুরুল ইসলামের পক্ষে। এরপর জেলা জজ আদালতে লীপার বাবা অক্ষয় কুমারের আপিলে রায় গড়ায় তার (অক্ষয়) পক্ষে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জহুরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে আপিল করলে রায় গড়ায় তার পক্ষে।
বিডি প্রতিদিন/৪ মে ২০১৮/হিমেল