ভুল চিকিৎসা করে রোগী হত্যাচেষ্টা মামলায় ঝালকাঠির রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকের মালিক ও দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ঝালকাঠির একটি আদালত। বৃহস্পতিবার বিকালে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা একটি নালিশী মামলা আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রাপ্তরা হলেন, রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকের মালিক মো. আহসান হাবিব সোহাগ, ক্লিনিকের আরএমও ডা. মো. মহিউদ্দিন ও রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শিব শংকর।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি গ্রামের দিনমজুর হাদিস নকিবের বিধবা কন্যা নাসরিন বেগম (২৮) গত ৫ মার্চ পেটে ব্যাথা নিয়ে রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে সোহাগ ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মহিউদ্দিনসহ ক্লিনিকের কর্মকর্তারা নাসরিনের অভিভাবকদের জানান নাসরিনের পেটে এপেন্ডিকস হয়েছে অপারেশন করতে হবে। অপারেশরে জন্য ১২ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। ওইদিন রাত ৮ টায় নাসরিনের অপারেশন করেন ডা. মহিউদ্দিন ও স্বাস্থ্য সহকারী শিব শংকর। অপারেশনের সময় কোন এনেস্থেসিয়ান (অজ্ঞান করার ডাক্তার) উপস্থিত ছিলেন না। চিকিৎসকরা ভুলে নাসরিনের সমগ্র তলপেট কেটে ফেলেন এবং দেখতে পান নাসরিনের পেটে বড় ধরনের টিউমার হয়েছে এপেন্ডিকস হয়নি।
সোহাগ ক্লিনিকের অনভিজ্ঞ চিকিৎসকরা নাসরিনের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে রাতেই নিজেদের এ্যাম্বুলেন্সে তড়িঘরি করে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। পরের দিন ৬ মার্চ শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় থেকে নাসরিনের নাম কেটে দেয়া হলে তাকে পুনরায় সোহাগ ক্লিনিকে নেয়া হয়। সোহাগ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বভাবিক করার জন্য নাসরিনকে দুইতিনদিন সেখানে রেখে নামে মাত্র চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর নাসরিনের অবস্থার অবনতি হলে অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।
নাসরিনের বোন জান্নাতি একাধিকবার তার বোনের চিকিৎসার জন্য সোহাগ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা খারাপ ব্যবহার করেন। এ ব্যাপারে মৃত্যুপথযাত্রী নাসরিনের ছোট বোন জান্নাতি বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার ঝালকাঠির সিনিয়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধির ৩৩৮/৩২৬/৩০৭/১০৯ ধারায় একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয় আহসান হাবিব সোহাগ, ডা. মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য সহকারী শিব শংকর ও সোহাগ ক্লিনিকের ম্যানেজার আব্দুল ওয়াদুদকে। বাদী পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মাহেব হোসেন।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং ম্যানেজার ওয়াদুদের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন।
বিডি প্রতিদিন/৪ মে ২০১৮/হিমেল