দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে গত দুই মাস ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় গেল চারদিন যাবৎ ফেরি চলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ঘোষণা করে বিকল্প পথে চলাচলের অনুরোধ করে কর্তৃপক্ষ।
ফলে ইভয় পাড়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে, কেউবা ভিন্ন পথে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এই সংকট নিরসনে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত থাকলেও কোনো উপকার না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নৌমন্ত্রীর হস্থক্ষেপে পদ্মা সেতুতে নিয়োজিত ড্রেজারের সাহায্যে নতুন চ্যানেল আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন চ্যানেলটি সচল হওয়ার কথা থাকলেও আরো দু একদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে কোন রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সচল থাকা ফেরি চলাচলে ১৮টি ফেরির মধ্যে কখন কখনও ২টি বা ৪টি ফেরি চলতে থাকে কিন্তু গত চারদিন তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। পদ্মায় হঠাৎ পানি কমে যাওয়া এবং পলিমাটিতে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়ে ফেরি চলাচলে দির্ঘদিন যাবৎ বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। আবার সীমিত সংখ্যক ফেরি এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যানবাহন নিয়ে পাড়ি দেওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে থাকে যাত্রী ও পরিবহন চালক-শ্রমিকরা। এতে বিআইডব্লিউটিসি বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের। কয়েকদিন ধরে পারাপারের অপেক্ষায় থেকে ঘাট এলাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় পরিবহন খাত আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ রাখার পর শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। নাব্যতা সংকট এবং পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া কার্যালয়ের কর্মকতা মো. জসিমউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ১৮টি ফেরির মধ্যে ছোট আকারের ৫টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল রাখার চেষ্টা করেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ৪টি রো রো ফেরিসহ ১৮টি ফেরিই উভয়ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র মতে, নাব্যতা সংকট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ'র ড্রেজিং কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে সিনোহাইড্রোর ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং শুরু করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার থেকে অত্যাধুনিক ড্রেজার দিয়ে চায়না চ্যানেলের এক প্রান্ত থেকে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। শনিবারও ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। সিনোহাইড্রো কোম্পানির ড্রেজিং কার্যক্রম শেষে কবে নাগাদ ফেরি চলাচলে চ্যানেল খুলে দেওয়া হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি তবে রবিবার থেকে সিমিত আকারে ফেরি চালুর চিন্তা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া কার্যালয়ের কর্মকতা মো. জসিমউদ্দিন।
সংশ্নিষ্ট সূত্র মতে, নৌরুটের ফেরিবহরে ৪টি রো রো ফেরিসহ ১৮টি ফেরি রয়েছে। প্রতিটি ফেরি দিয়ে প্রতিদিন ২২০০ গাড়ি পারাপার করা হতো। সাম্প্রতিক সময়ে নাব্যতা সংকটের কারণে সব ফেরি চলাচল করতে পারছে না। সর্বশেষ ৫ দিনের হিসাবে গত বুধবার ৪টি, বৃহস্পতিবার ৬টি, শনিবার ৫টি ও গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫টি ফেরি দিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সীমিত সংখ্যক গাড়ি লোড করে নামমাত্র ফেরি চলাচল করে।
বিডি প্রতিদিন/৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হিমেল