চড়ুই পাখি এক সময় গ্রামীণ মানববসতিতে ঘর বাঁধতো। মূলত খড়ের ছাউনির নীচে গর্ত করে বাস করতো এরা। কখনও খড়কুটো, শুকনো ঘাস, লতা-পাতা দিয়ে কড়িকাঠে কিংবা কার্নিশেও বাঁধতো বাসা। তখন বাড়ির আঙিনা, ঘরের কোণ-বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক। লোকালয়ে স্বাচ্ছন্দে নিজেদের মানিয়ে নিত তারা।
এখন আগের মতো দেখা যায়না তাদের। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চড়ুইদের বংশবৃদ্ধি ও টিকে থাকা। ভূস্থাপত্যিক বিবর্তনের এই যুগে চ্যালেঞ্জের মুখে টিকে থাকা এই চড়ুই পাখি বর্তমানে ঠাঁই নিয়েছে সিলেট শহরতলীর নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতাল ক্যাস্পাসের প্রতিটি গাছই ওদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সন্ধ্যা নামার আগেই রাত্রীযাপনের জন্যে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে অগুণতি চড়ুই পাখি। শহরের এ হাসপাতালটি যেন চুড়ুই পাখির জন্যে পরম মমতায় ভরা ভুবন, নির্ভয় আবাসন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্টাফদের সাথেও রয়েছে তাদের গভীর মিতালী।
সরেজমিন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে গিয়ে দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর দেখা মিলে চড়ুই পাখির। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পাখিরা অবস্থান নেয় হাসপাতাল ক্যম্পাসের প্রতিটি গাছে। অন্ধকার হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে এগাছ-ওগাছে উড়াউড়ি, ফুড়ুত-ফুড়ুত আসা-যাওয়া আর রাত্রীযাপনের ব্যস্ত সব আয়োজন। চড়ুই পাখির কিচির-মিচির শব্দে এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি হয় ব্যস্ত কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। নিজেরদের মতো করে আশ্রয় নেয়ার পর নেমে আসে নীরবতা।
সারাদিন নগরজুড়ে আহার খোঁজা শেষে ওদের ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম নেয় গাছের শাখা-পাতার ফাঁকে ফাঁকে। পাখিদের এ মিলনমেলা প্রতিদিন উপভোগ করেন হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে একটু বাড়তি পরিশ্রম হলেও, এখানে পাখিদের উপস্থিত আমাদের ভালো লাগে।
নিরাপত্তা প্রহরীরা জানান, পাখিদের বসবাসে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে আমরা সেদিকেও লক্ষ রাখি।
এব্যাপারে নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মো. আফজল মিয়া ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, কোন জীবনই ক্ষুদ্র নয়। এরা প্রকৃতিরই একটা অংশ। এদের ভালোবাসা উচিত। শুধু চড়ুই পাখিই নয়, শীতকালে এখানে অতিথি পাখিরাও আসে। আমরা তাদের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করি।
বিডি প্রতিদিন/১৩ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল