বর্ণিল সাজ সজ্জায় শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজনে রঙিন হয়ে উঠেছে নরসিংদী। বৈচিত্র সাজ সজ্জা, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেমে আগন্তুকদের মুগ্ধ করার কমতি রাখেনি আয়োজকরা। জেলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে দেবীকে বরণ করে নেয়ার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।
প্রতিবছরের মতো এবারও নরসিংদীর পূজা মণ্ডপগুলোতে জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লাখ হিন্দু ধর্মালম্বীদের সমাগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে দেবীর প্রতিমাকে মণ্ডপে পৌছে দিতে মৃৎশিল্পীদের চোখে যেন এখন ঘুম নেই। শেষ মুহূর্তে দেব-দেবীর প্রতিমাকে তুলির আচঁরে জীবন্ত করে তোলার চেষ্টায় মগ্ন তারা।
নরসিংদী জেলার কেন্দ্রীয় মন্দির সেবা সংঘের পুরোহিত দেবদাস চক্রবর্তী জানান, আগামী সোমবার মহাষষ্ঠীতে দেবী মর্ত্যে নেমে আসবেন। তার আগমন এবার ঘোটকে। যার অর্থ ফলন ছত্রভঙ্গ। আর আগামী শুক্রবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে দেবী ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। যার অর্থ স্বাস্থ্যহানি ও মড়ক। অর্থাৎ এতে লোকজনের ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এবার সকল অশুভ শক্তির বিনাস এবং শুভ শক্তি উদয়ের কামনায় আমরা মায়ের কাছে আরাধনা করব।
নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৩৪৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এদের মধ্যে নরসিংদী সদরে ৯৬টি, মনোহরদীতে ৪৬টি, শিবপুরে ৭৩টি, রায়পুরায় ৬৪টি, পলাশে ৪২টি ও বেলাবতে ২২টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গত বছরের চেয়ে ১টি বেশি।
সরেজমিনে শহরের বেশ কয়েকটি প্রতিমা শিল্পালয় ঘুরে দেখা যায়, দুর্গা পূজার প্রস্তুতির প্রায় শেষ মুহূর্তে মৃৎ শিল্পীরা ব্যস্ত আপন মনে প্রতিমা রাঙাতে। কাপড় পরিধান ও তুলির আচঁরে জীবন্ত করে তুলছে প্রতিমাকে। এরই মধ্যে পরিপূর্ণ প্রতিমাগুলো শিল্পালয় থেকে মণ্ডপে নেয়া হচ্ছে। আবার কিছু মণ্ডপেই তৈরী হচ্ছে প্রতিমা।
সেবাসংঘ দূর্গা মণ্ডপের প্রতিমা শিল্পী জগদ্বিশ অধিকারী বলেন, দর্শনার্থীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবছর পুরোনো মাটির আদলে হওয়া থিমের সাথে মিল রেখে চারু ও কারুকলার সংমিশ্রনে প্রতিমা তৈরি করেছি। আধুনিক যে ভাবধারায় প্রতিমা তৈরী হচ্ছে এতে মায়ের প্রতি ভক্তি নষ্ট হচ্ছে। এবার আমরা মা দূর্গার দেবী মূর্তিতে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
প্রতিবছরের মতো এবারও দর্শনার্থীদের চাহিদা পূরণে কমতি রাখেনি শহরের বড় বড় দুর্গা পূজা মণ্ডপ কমিটি। শহরের সেবা সংঘ, বাগবিতান ক্লাব, শিববাগ, অগ্রণী সংঘ, ক্রীড়া চক্র, বৌয়াকুড় দূর্গা মন্ডপের প্রস্তুতির কমতি নেই। পূজা মন্ডপে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা, বৈচিত্র সাজসজ্জা, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেমের সমারোহ ঘটিয়েছে আয়োজকরা।
অন্যান্য বছরের ন্যয় এবারও জেলার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দূর্গা পূজার আয়োজন করছে শহরের মধ্যকান্দাপাড়ার বাগবিতান ক্লাব। পূজাটির বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। যার বেশির ভাগই ব্যয় হচ্ছে এবার লাইট এবং সাউন্ডে। মন্দির উন্নয়নের কাজ চলছে এবছর তাই প্রত্যেক বছর নানা ধরনের থিম নিয়ে কাজ করলেও এবছর আমরা তা করতে পারছি না। এমটাই বললেন বাগবিতান ক্লাবের সভাপতি বিনয় ভূষন সাহা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সূর্যকান্ত দাস বলেন, পূজায় সরকারি অনুদানসহ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা পূজা মণ্ডপগুলোতে অনুদান দিয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নরসিংদীতে ঝাঁকজমকপূর্ণ শারদীয় দূর্গোৎসব পালিত হবে। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে বৃষ্টি না হলে আশা করছি পূজায় নরসিংদীর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকলাখ মানুষের সমাগম হবে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, পূজায় পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। তাদের সহযোগীতার জন্য থাকবে আনসার ও মণ্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল। এছাড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি স্পেশাল টিম নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পূজা মণ্ডপ গুলোতে গোয়েন্দা নজরধারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর