উত্তরবঙ্গের বৃহৎ দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ক্ষেত্র ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে মাছ নয়, চলছে ধান চাষ। আশুড়ার বিলের প্রায় অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে এ ধান চাষ করছেন কৃষকরা। বিলে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ হয়।
তবে ঐতিহাসিক আশুরার বিলে পানি ধরে রাখতে একটি স্যুইচ গেইট এবং খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামিম আহমদ জানান।
তদারকি আর মাছ সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণসহ খনন করলে এই ঐতিহাসিক আশুড়া বিলে দেশীয় মাছ যেমন সংরক্ষন করা যাবে তেমনি উত্তরবঙ্গে দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ সম্ভব এবং কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিল থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ১২০ মে. টন মাছ পাওয়া যায় বলেও মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অপরদিকে কৃষকেরা জানায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ মণ ধান পাবেন তারা। খননসহ বিলের পূর্ব প্রান্তে পানি ধারনের জন্য একটি স্যুইচ গেট বা রাবার ড্যাম স্থাপন করা গেলে শুস্ক মৌসুমে পানি কমবে না বলে স্থানীয়রা দাবি করেছে।
বর্ষা মৌসুমে এ বিলে লাল, সাদা শাপলা ফুল বিলের সৌন্দর্য দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণ পিপাষুরা মুগ্ধ হয়। এ কারণে বন বিভাগও এটিকে পর্যটকদের দর্শনীয় করতে পরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কি. মি. দূরে সরকার ঘোষিত জাতীয় উদ্যান শালবনের কোল ঘেষে এ বিলের অবস্থান। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় ৫ কিলোমিটার।
আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে পৌরণিক বিচিত্র কাহিনী। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অশুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের নিকট অশুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অশুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অশুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়।
অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানী এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তীর জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের নাম আছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে আরো কিছু চমৎকার কাহিনীও রয়েছে। যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। পৌরনিক কাহিনী যাই থাক ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে মৎস্য সম্পদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিলে টেংরা, কই, মাগুর, পুটি, চিংড়ি, আইড়, শোল, গজাড়, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ এখনও পাওযা যায় বলে স্থানীয়রা জানান।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামিম জানান, শুস্ক মৌসুমে পানি না থাকার কারণে ধান চাষ করে কৃষক। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এ বিলটিতে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ এখনও ধরা পড়ে। আশুড়ার বিলের বুড়িদহ নামক স্থানে ২০০৬ সালে ০.৫ হেক্টর জমিতে একটি অভয়াশ্রম ও কাজলাদহ নামক স্থানে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ০.৫ হেক্টর জমিতে আরেকটি অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। এ জায়গাতে কিছু পানি রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/১৬ নভেম্বর ২০১৮/হিমেল