দেশে পাথরের চাহিদা বাড়ার সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বিক্রির চেয়ে অবিক্রিত পাথরের মজুদ বেড়েই চলেছে। যদিও বিক্রি না বাড়ার পিছনে পরিবহনে ওভারলোডিংকে দায়ী করছেন খনি কর্তৃপক্ষ।
জার্মানিয়া ট্রাষ্ট কনসোডিয়াম (জিটিসি) কর্তৃক খনির পাথর উত্তোলন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মধ্যপাড়া পাথর খনির ইয়ার্ডে পাথরের মজুদ দাঁড়িয়েছে সোয়া ৪ লাখ মে. টন। তবে খনি কর্তৃপক্ষের দাবি, পাথর বিক্রির পরিমান কম থাকলেও তুলনামূলক বেড়েছে বিক্রি। গত অর্থ বছরে ১৪১ কোটি টাকার পাথর বিক্রি হয়। সেখানে চলতি অর্থ বছরের ৬ মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পাথর বিক্রি করা হয়েছে।
এভাবে খনির উন্নয়ন ও উত্তোলন বৃদ্ধিসহ সার্বিক কাজের ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী বছরেই এই মধ্যপাড়া পাথর খনি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে এমনটাই আশা করছেন পাথর খনির ডিজিএম(মার্কেটিং) রাজিউন নবী। তাই দেশি পাথরের বাজার ধরে রাখতে অতিরিক্ত পাথর পরিবহন বন্ধ ও আমদানীকৃত পাথর ব্যবহারে নিরুৎসাহী করার তাগিদ দেন তিনি।
জিটিসি ও খনি সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সারের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খনি থেকে পাথর উত্তোলন হয়েছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬৬ মে. টন। সেখানে বিক্রি ৭ লাখ ৩৩ হাজার ২২ মে. টন। গত একমাসে (ডিসেম্বর) উত্তোলিত হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার মে. টন পাথর। বিক্রি হয়েছে ৩৯ হাজার ২২৬ মে. টন। ২০১৯ সালেও প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার ৮০০ মে. টন পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। পাথর উৎপাদন লক্ষমাত্রায় পৌঁছাতে জিটিসি তাদের ৭ শতাধিক শ্রমিক, অর্ধশতাধিক বিদেশী খনি বিশেষজ্ঞ, অর্ধশত দেশী প্রকৌশলীসহ দেড় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লি. এর ডিজিএম (মার্কেটিং) রাজিউন নবী জানান, উত্তোলিত পাথর ৭ প্রকার সাইজের রয়েছে। একেক সাইজের পাথর একেক সময় বিক্রি হয়। তাই ইয়ার্ডে পাথর থাকলে ক্রেতারা তা দেখে অর্ডার দেন। তাই এ মজুদ সমস্যার না।
তিনি বলেন, ফুলবাড়ী-দিনাজপুর এবং রংপুর-হাটিকুমড়ো পর্যন্ত ফোর লেনের মহাসড়ক নির্মান শিগগিরই শুরু হলে এ খনির পাথর ব্যবহার করা হবে বলে আমাদের সাথে তারা যোগাযোগ করেছেন। এ কাজে তাদের প্রায় ১০ লাখ মে. টন পাথর প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া আমরা বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি, যাতে পাথর বিক্রি আরও বৃদ্ধি পায়।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লি. এর মহা-ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবু তালেব ফরাজি জানান, গত বছরের এপ্রিল থেকে ট্রাকে ওভারলোডিং নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশে সড়ক ও সেতু বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী একটি টু-এক্সেল (৬ চাকা) ট্রাকে ২২ টন ও একটি ত্রি-এক্সল(১০চাকা) ট্রাকে ৩২ টন পর্যন্ত। এই নিয়ম মেনে মধ্যপাড়া খনি কতৃপক্ষ ট্রাকে পাথর পরিবহনের অনুমতি ও লোড দিয়ে থাকে। কিন্তু পাথর আমদানীকারকরা সরকারের এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে একটি টু-এক্সেল ট্রাকে ৩২ টন ও একটি ত্রি-এক্সেল ট্রাকে ৫৫ টন পর্যন্ত বহন করছে। এতে পাথর ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ কমে যাওয়ায় খনি থেকে পাথর নিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তবে সড়ক ও সেতু কতৃপক্ষ যদি ওভার লোড পরিবহন পুরোপুরি রোধ করতে পারে, তাহলে খনিতে পাথর বিক্রি আরও বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। কারণ বাজারের তুলনায় মধ্যপাড়া খনির পাথর গুনে-মানে ভাল এবং দামেও কম।
উল্লেখ্য, পাথর উত্তোলন করতে ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানিয়া ট্রাষ্ট কনসোডিয়াম (জিটিসি) এর সাথে প্রতিদিন ৫ হাজার মে. টন করে পাথর উত্তোলনের লক্ষমাত্রা নিয়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ মে. টন পাথর উত্তোলনের চুক্তি করে। উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন করছে। বর্তমানে খনিটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৮০০ মে. টন পাথর উত্তোলন হচ্ছে। গত বছরে পাথর বিক্রি হয়েছে ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন বলে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল