লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় বাবুল হোসেন নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক (কনসালটেন্ট কার্ডিওলোজি) ডা. ভবানী প্রসাদ রায় হাসপাতালে ছিলেন না। তিনি প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যস্ত ছিলেন।
নিহত রোগীর স্বজনদের এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। একই সঙ্গে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য রোগীরাও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন।
দুপুর দেড়টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বজন হারিয়ে আহাজারি করছেন নিহত এক রোগীর পরিবারের লোকজন।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের সাহাপুর এলাকার কালামিয়ার ছেলে বাবুল হোসেন হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথা সময়ে চিকিৎসা না করে সময়ক্ষেপণ করেন বলে স্বজনদের অভিযোগ।
এ সময় ওই রোগীকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সালাহ উদ্দিন শরীফকে দেখানো হয়। তিনি রোগীটিকে হার্টের ডা. ভবানী প্রসাদের কাছে পাঠান। ভবানী প্রসাদের চেম্বারে গিয়ে তাকে পাননি রোগীর স্বজনরা। এক পর্যায়ে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে তিনি তা রিসিভ করে একবার নোয়াখালী ও আরেকবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।
পরে সিভিল সার্জনকে ফোন দেওয়া হলে কিছুক্ষণ পরই ওই চিকিৎসক হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু এর আগেই রোগী মারা যান। এতে করে চিকিৎসা অবহেলায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন স্বজনরা।
এসময় হাসপাতালের আশেপাশের লোকজন ও স্বজনরা উত্তপ্ত হয়ে উঠেন। পরে খবর পেয়ে শহর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. ভবানী প্রসাদ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যক্তিগত কাজে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য হাসপাতালের বাইরে ছিলেন তিনি।
তবে রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর সঠিক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অন্যান্য সেবা গ্রহীতারাও অভিযোগ করেন। তিনি তার প্রাইভেট ক্লিনিকে (শুভ হার্ট, মেডিসিন এন্ড কনসালটেশন সেন্টার) যেতে রোগীদের প্রভাবিত করেন বলে জানান তারা। ঘটনার সময় তিনি ওই ক্লিনিকেই ছিলেন বলে অভিযোগ উঠে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎক্ষণাৎ অর্থাৎ দুপুর ১ টা ৫৭ মিনিটে তার প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, ওই সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে তিনি যেসব রোগী দেখেছেন সেসব কাগজপত্র (ব্যবস্থাপত্র) কাটা ছেঁড়া করতে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি, যা ক্যামরায় ধারণ করা হয়।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে তা সরিয়ে ফেলেন। কি কাগজপত্র সরালেন এবং সরকারি হাসপাতালে না থেকে এ সময়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে কি করছেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে কিছু না বলেই বের হয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যান ওই চিকিৎসক।
এদিকে চিকিৎসা অবহেলায় রোগী মৃত্যুর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। ঘটনার সময় দায়িত্বরত চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়নি, অভিযোগটি সঠিক। দায়িত্ব অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
বিডি প্রতিদিন/কালাম