খননের নামে গলাটিপে যেন হত্যা করা হচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাসিয়া নদী। মৃতপ্রায় এ নদীটির তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই তৃতীয় দফায় চলছে এর খনন কাজ।
অভিযোগ, সঠিক মাপে খনন না করে অপরিকল্পিতভাবে দায়সারা কাজ করে নদীর মাটি নদীতেই ফেলে ভরাট করা হচ্ছে দু’তীর। এর ফলে, একদিকে যেমন আরও ছোট করে ফেলা হচ্ছে নদীটিকে, তেমনি করে সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে জায়গা দখলের। খননের নামে বাসিয়া নদীকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা ক্ষুব্ধ করেছে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীকে। তারা বাসিয়ার দু’তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সঠিক মাপে নদী খননের জোর দাবি তুলেছেন ফের।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বিশ্বনাথ এলাকায় ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ‘বাসিয়া নদী পুনঃখনন প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার এই খনন কাজটি পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামছুর রহমান এন্টারপ্রাইজ। ইতোপূর্বে দু’বার এর খনন কাজ হয়েছে। নদীর উত্তর তীর হতে দক্ষিণ তীরে ফিতা দিয়ে মেপে ৩৩মিটার (১শত ৯ফুট) সীমানা নির্ধারণ করা হলেও দু’বারই সঠিক
মাপে খনন হয়নি বলে অভিযোগ উঠে।
অভিযোগ উঠে খননের নামে ঘাস চাটাইয়ের এবং নদী তীরের বিশাল সব গাছ কাটার। বাসিয়া নদীর দু’তীরের ১৮৭ জন অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উচ্ছেদ মামলার (নং-৪/২০১৭-বিশ্বনাথ) প্রেক্ষিতে কয়েকজন দখলদারদের দায়ের করা হাইকোর্টের রিট পিটিশনের কারণে দু’দফা খনন কাজের সময় বহাল থাকে অবৈধ স্থাপনাগুলোও।
এবার তৃতীয় দফায় খনন কাজ শুরু হলে ফের উঠে অভিযোগ। এবারও সঠিক মাপে খনন না করে বরং খনন করা মাটি নদী তীরে ফেলে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে বাসিয়াকেই-এমন অভিযোগ তুলেছেন উপজেলাবাসী। সোমবার বিকেলে খনন কাজ পরিদর্শনে গেলে পাওয়া যায় এমন অভিযোগের সত্যতা। দেখা যায়, নদীর তীর থেকে মাটি খনন করে তীরেই ফেলা হচ্ছে।
বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই চলছে নদী খনন। তাও আবার খননের নামে চলছে উপজেলাবাসীর সাথে তামাশা। খনন করা মাটি নদী তীরেই ফেলে পক্ষান্তরে এটিকে আরও ছোট করে ফেলা হচ্ছে। ভরাট করে দেয়া হচ্ছে নদীর তীর। এর ফলে লাভবান হবে দখলদাররাই।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সামছুর রহমান এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে তৃতীয় দফা খনন কাজটি পাওয়া সাধনা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার বাদল সরকার বলেন, খনন করা মাটি আপাতত নদী তীরে ফেলা হলেও ইউএনও স্যারের দায়িত্বে থাকায় এগুলো আমরা সরাতে পারছি না। তবে, খুব শিগগিরই এগুলো সরানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, নদীর তীরের মাটিগুলো সরানো হবে। অবৈধ স্থাপনা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সেগুলো উচ্ছেদ করে নদী তীরের অবশিষ্ট অংশও খনন করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন