পর্যটক উৎসবে মেতেছে সবুজ অরণ্যের রাজ্য রাঙামাটি। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নৈসর্গিক পাহাড় এ অঞ্চল। অগণিত পর্যটকের ঢল নামছে প্রায় প্রতিদিন। তাদের সরব উপস্থিতিতে রাঙামাটি যেন উৎসবের নগরী। পুরো শহর জুড়ে এখন পর্যটকদের ঠাসা ভিড়। অন্যান্য বছরগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাঙামাটিতে পর্যটকদের বেশি ভিড় চোখে পড়তো। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিন আসছে দূর-দুরান্ত থেকে দেশী-বিদেশী পর্যটক। কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে আসছেন। আবার কেউ আসছে পিকনিকের দল নিয়ে। অবকাশ কাটাতে আসা হাজারো পর্যটকদের বাস, মাক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের বহর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পিকনিক যাত্রীবাহী বাসগুলো ভিড়ে জমেছে এখানে। যেন তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই। একই অবস্থা হোটেল মোটেলগুলোতেও। শহরের সবকটি আবসিক হোটেল, মোটেল, সরকারি রেস্ট হাউসে লেগে আছে মানুষের ভিড়। কোথাও রুম খালি থাকছে না। পহেলা ফাগুন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে মাসজুড়ে রয়েছে আগামী বুকিং।
এ ব্যাপারে রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে রাঙামাটি বেশ পর্যটক আসছে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার পর্যটক ঝুলন্ত সেতুতে প্রবেশ করছে। এছাড়া মোটেলগুলোতে অগ্রিম বুকিং তো রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দিবসগুলো সামনে রেখে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রয়েছে পুরো মোটেল বুকিং। এতে যেমন রাজস্ব আয় বাড়বে, তেমনি এ সুবিধা ভোগ করবে পর্যটক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, শীতের উষ্ণতার চাদরে নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। আর এ প্রকৃতির রূপ বৈচিত্র্যের টানে যান্ত্রিক জীবনের কান্তি দূর করতে হ্রদ, পাহাড় আর ঝর্ণার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে রাঙামাটি আসছে হাজারো পর্যটক। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্ণা, ডিসি বাংলো পার্ক ও কাপ্তাই-আসামবস্তী সড়কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ কাপ্তাই হ্রদ নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছে। আবার কেউ প্রকৃতিকে উজাড় করে দিচ্ছে নিজেকে। বিকালের গোধুলীর রং যখন লাল বর্ণ ধারণ করে, তখনি মানুষের ভিড় জমে পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে। আর এসব পর্যটকদের সাহায্য-সহায়তায় সর্বাধিক পাশে থাকছে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা।
রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশ এসআই মো. কামাল উদ্দীন জানান, রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সব সময় প্রস্তুত। বছরের শুরু থেকে রাঙামাটিতে প্রায় প্রতিদিন পর্যটক আসছে। তাই তাদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে।
রাঙামাটি পর্যটক কমপ্লেক্সের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সূর্য্য সেন ত্রিপুরা জানান, রাঙামাটি ডিসি বাংলো এলাকায়, পালওয়ে পার্ক, লাভ পয়েন্ট, শুভলং ঝর্ণা, পর্যটন কমপ্লেক্স, আসামবস্তি সড়ক, প্যাদা টিং টিং, বরগ্যাং ও ফুরামন পাহাড়ের মত অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটিতে। এসব স্থানে পর্যটকদের জন্য গড়ে তুলে হয়েছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। আর কাপ্তাই হ্রদে নৌ ব্রমনের জন্য আছে পর্যাপ্ত ইঞ্জিন চালিত বোট। তাতেই পর্যটকরা আনন্দিত।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা