ফরিদপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত কাট ফ্লাওয়ার জারবেরার। সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধর ডাঙ্গী গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও তার ভাই লিয়াকত হোসেন মিলে চাষ করেছেন উচ্চমূল্যের জারবেরা ফুলের। বর্তমানে হরেক রকমের জারবেরা ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে বাগানটি। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন ফুল কিনতে।
চাষী আনোয়ার হোসেন জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি করা ৭ হাজার চারা ভারতের পুনে থেকে আমদানি করেন তিনি। ৫০ শতাংশ জমি তৈরি পলিসেড ও আমদানিকৃত চারাসহ সব খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে ২১ লাখ টাকা। চারা রোপনের তিন মাসের মধ্যেই পুরো বাগানটিতে এখন শোভা পাচ্ছে লাল, হলুদ, সাদা, পিংক, মেজেন্ডা, কমলা, গোলাপী রঙের জারবেরার। আনোয়ার হোসেন জানান, জারবেরা ফুলের আবাদ ব্যয় বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই তিনি এই ফুলের আবাদ শুরু করেছেন। প্রথমবারেই তিনি বাজিমাত করতে পেরেছেন। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে তার ক্ষেত। ইতোমধ্যে কয়েকদফা ফুল বিক্রি করেছেন ঢাকার শাহবাগে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ ফুল চাষ করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, বাগান থেকে ৩ বছরের বেশী সময় ফুল পাবো বলে আশা করছি। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো। ২০ লাখ টাকা খবচ করে ১ কোটি টাকা আয় হবে বলে প্রত্যাশা করছি। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে তিন বছরে জারবেরা বিক্রি করেই বড় ধরনের লাভের মুখ দেখবো।
ফুল চাষী লিয়াকত হোসেন জানান, দেশি ও বিদেশি বাজারে জারবেরা ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পড়ালেখা করে চাকরির আশায় বসে না থেকে দুই ভাই মিলে ফুল চাষের উদ্যোগ নেই। এরই ধারাবাহিকতায় জারবেরা চাষ করি। জারবেরা ফুল চাষে অনেক ব্যয়। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে আমার ফুল চাষ করেছি। এখন আমাদের ভয় কেটে গেছে। আমরা এ ফুল বিক্রি করে বছরে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় করতে পারবো। আমাদের দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামীতে আমরা আরো বড় পরিসরে এ ফুল চাষে উদ্যোগ নেবো।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল বাশার জানান, জারবেরা ফুল চাষ ব্যয়বহুল। ফলে এ ফুলের চাষ করতে অনেকেই আগ্রহী হয় না। ফরিদপুরে প্রথমবারের মতো এই ফুলের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, জারবেরা ফুল গাছ থেকে তোলার পর ১০ থেকে ১৫ দিন সতেজ থাকে। গাছে ফোঁটা অবস্থায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন সতেজ থাকে। ফলে এই ফুলের চাহিদা রয়েছে সারা বছর। সারা বছর গাছে এ ফুলটি ধরলেও এপ্রিল-মে হলো ভরা মৌসুম। সব ধরনের জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে পারে। তবে উজ্জল রোদের সাথেই সখ্য বেশী। বাংলাদেশে শীতের শেষ ভাগে জারবেরা ভালো হয়। তবে, পলি সেড দিয়ে এই ফুলের চাষ করলে সারা বছরই ভালো ফলন পাওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/মাহবুব