পঞ্চগড়ের চলছে ক্রিকেট জুয়া। শহরের পাশাপাশি মহামারির মতো প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। পঞ্চগড়ে ক্রিকেট জুয়ার সবচেয়ে বড় মার্কেট তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকা। নাম গোপন রাখার শর্তে এই এলাকার স্থানীয়রা জানায়, প্রতি রাতে এই এলাকায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার জুয়া চলে। জুয়া পরিচালনা এবং দুই পক্ষের মধ্যে লেনদেন করিয়ে দেয়ার জন্য হাজারে ১০০ টাকা করে কমিশন নেয় ডিলাররা। ডিলারদের অনেকেই এখন লাখ লাখ টাকার মালিক হয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু আইপিএল নয় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে, টেস্ট, টি-২০, বিপিএল, বিশ্বকাপ আসর, এমনকি দেশ-বিদেশের ঘরোয়া লিগ নিয়েও চলছে জুয়া। কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড় কত রান করবে, কোন বোলার কটা উইকেট নেবে-এমন অনেক বিষয় নিয়ে বাজি ধরা হয়। ক্রিকেট নিয়ে ২০ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জুয়া চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভজনপুরের এক যুবক জানান, হঠাৎ কিভাবে যে জুয়ায় মজে গেলাম বুঝতেই পারিনি। শুরুতে ৫০০ টাকা দিয়ে খেলা শুরু করি। একটা সময় এক দিনেই বাজি ধরেছিলাম ৪ লাখ টাকা। আমি সর্বমোট ২২ লাখ টাকা হারিয়েছি। এখন আমি এ পথ থেকে সরে এসেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, আমার ছেলে ক্রিকেট জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকা জুয়া খেলে উড়িয়ে দিয়েছে। বাড়ির আসবাপত্র, গহনা চুরি করে জুয়া খেলেছে। নিজের থাকার খাটটিও বিক্রি করে দিয়েছিল। ওর জন্য মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারি না। আমার মতো ভজনপুরের অনেক বাবাই এমন ছেলেদের নিয়ে এমন কষ্টে আছে।
ক্রিকেট জুয়ার ডিলার হিসেবে পরিচিত হোটেল ব্যবসায়ী রবি বলেন, ভাই আমি নেশায় পড়ে ক্রিকেট জুয়া খেলেছি। এখন আমি এটা থেকে সরে আসতে চেষ্টা করছি। আমি ডিলার না। তবে যারা ডিলার তাদের নাম বলা বারণ আছে। তাদের নাম বললে তারা আমাকে এখানে ব্যবসা করতে দিবে না।
পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমার অনেক বন্ধুই ক্রিকেট জুয়ায় আসক্ত। খেলা শুরু হলেই তারা আমাদের বাজি ধরতে প্রলোভন দেখায়। তাই আমি তাদের সাথে মেশা বন্ধ করে দিয়েছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, ক্রিকেট জুয়ার সাথে জড়িত অনেককেই গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আইপিএল শুরু হলেই এই চক্র বেশি সক্রিয় হয়ে উঠে। তাদের তথ্য প্রমাণসহ ধরাটাও বেশ জটিল। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সেই সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকেও তাদের বিষয়ে একটু নজর রাখতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা