পাকা মরিচকে পঞ্চগড়ে লাল সোনা বলা হয়। প্রতিবছর এই জেলা থেকে লক্ষ লক্ষ টন মরিচ দেশের নানা প্রান্তে রপ্তানি করা হয়। এই জেলার পাঁচ উপজেলাতেই মরিচের চাষ হয়।
আটোয়ারী উপজেলার ৯০ ভাগ জমিতে এই সময়ে মরিচের আবাদ করে কৃষকেরা । অল্প খরচে বেশি লাভ হয় বলে মরিচের আবাদ করতে আগ্রহী হয় চাষিরা। কিন্তু এবার গাছেই পচে যাচ্ছে মরিচ। পেঁকে ওঠার আগেই মরিচ সাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।
এই জেলার মাটি মরিচ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। প্রতিবারের মতো এবারও জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা ধারদেনা করে মরিচ চাষ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে মরিচ চাষ করে ভালো মুনাফা পেয়েছিলেন তারা। কিন্তু এবার নানা রোগ বালাইয়ের কারণে লোকশান গুণতে হবে বলে দাবি চাষিদের।
মরিচ চাষিরা বলছেন, প্রথমদিকে মরিচের আবাদ খুবই ভালো লক্ষ্য করা গেলেও হঠাৎ করে মরিচ ক্ষেতে নানা রকম পোকার আক্রমণ শুরু হয়। মরিচ তোলার সময় টেপা পচা ( এ্যানথ্রাক্সনস ) রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মরিচের গাছেই মরিচ শুকিয়ে পচে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করেও কোন লাভ হয়নি।
চাষিরা বলছেন, এ বছর লাভতো দূরের কথা ঘরে পুঁজিও তুলতে পারবেন না তারা। এদিকে স্থানীয় সরকারি কৃষি বিভাগের কেউই খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
বোদা উপজেলার হাবসীপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রথমে কোন একটি মরিচ ক্ষেতের কয়েকটি গাছে শুরু হয়। পরে একদিনের মধ্যে গোটা ক্ষেতেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং এক রাতের মধ্যেই ক্ষেতের সব মরিচ পঁচে যায়, পরে ঝরে পরে। এবার লোকসান গুনতে হবে।
আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা খোঁজ খবর নেয় না। পরামর্শও পাওয়া যায় না। আমরা মাঠে মারা গেলাম এবার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডার কারণে মরিচের আবাদে (এ্যানথ্রাক্সনস) টেপা পচা রোগ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া ভালো হলেই কেটে যাবে।
তিনি বলেন, এ বছর জেলায় ১০৪৪০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। বাঁশগাইয়া, বিন্দু, হট মাষ্টারসহ স্থানীয় জাতের মরিচের চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশী জামিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২ টন শুকনো মরিচের ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল