বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় চলতি মৌসুমের বেরো ধানের বাম্পার উৎপাদন করার পরও ৩০ হাজার কৃষক পরিবারে হাসি নেই। এই উপজেলায় এবার প্রায় এক লাখ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেও সরকারি ভাবে ক্রয় করা হবে ৪০৩ মেট্রিক টন ধান। বহু কষ্টে উৎপাদিত ধানের মূল্য না পেয়ে দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিওদের সুদ মিটাতে কৃষকদের উৎপাদিত ধান চলে যাচ্ছে মিল মালিকদের গুদামে। এখনও সরকারি ভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু না হওয়ায় তারা নায্যমূল্য পাচ্ছে না।
সুরশাইল গ্রামের কৃষক শুধাংশু মন্ডল, মুন্না শেখ, কুরমনি গ্রামের রেজাউল খান, বুদ্ধ বসু, খিলিগাতি’র বাবলু মন্ডল, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক জানান, এ বছর তারা চিংড়ি চাষে বিপর্যয়ের পর বেশী-বেশী করে বোরো ধান চাষ করেছেন। অনেক আশা ছিল এ বছর উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পাবেন। ঘুচবে ধারদেনা ও পাওনাদারদের তাড়া। মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু এ উপজেলায় সরকারী ভাবে এখন ও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। ফলে কৃষকেরা নায্যমূল্য পাচ্ছে না। এখানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকায় দরে।
এ বছর সরকার নির্ধারিত মূল্যে রয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। অথচ প্রতিদিন একজন কিষাণের মজুরি দিতে হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। এতে সাধারণ কৃষকদের ধান কাটা শ্রমিকের মজুরির দাম পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উৎপাদিত ধান এখন আর তাদের গোলায় ভরে রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের দেনার দায়ে পানির দামে ধান চলে যাচ্ছে মিল মালিকদেও ট্রাকে। ভরছে মিল মহাজনের গুদাম। তাই এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারের কারো মুখে হাসি নেই।
চিতলমারীর ধান ব্যবসায়ী আসলাম বিশ্বাস, সুকুমার ঘটক, জাকির হোসেন ও রফিক আহম্মেদ জানান, এ উপজেলার উৎপাদিত ধান ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, যশোর, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাইচ মিলে বিক্রি হয়ে থাকে। মিল থেকে তারা যেমন দাম পান সেই হিসাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে থাকেন।
চিতলমারী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রাণী ব্রহ্ম জানান, ধান-চাল ক্রয়ের চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এ বছর সরকারি ভাবে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা (প্রতি মণ ১০৪০ টাকা) ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩৬ টাকা (প্রতি মন ১৪৪০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। চিতলমারীতে এখনও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ উপজেলায় মোট ৪০৩ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, উপযোগী আবহাওয়া, পোকা-মাকড়ের কম উপদ্রব ও যথাযথ পরিচর্যায় এ বছর বোরো’র বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে এখানে প্রায় এক মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে। তাই উৎপাদিত ধানের নায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতো।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন