সারা দেশে রমজান মাস উপলক্ষে ন্যায্য মূল্যে টিসিবির পাঁচটি পণ্য ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি শুরু হলেও বান্দরবানের লামা উপজেলায় তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে।
টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী (অফিস প্রধান) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বরাদ্দ পাওয়ার পরেও পণ্য উত্তোলন না করার বিষয়টি দুঃখজনক। নতুন কেউ ডিলার নিতে আগ্রহী হলে বর্তমান ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করে তাদের দেওয়া হবে।
লামায় টিসিবির সকল ডিলার বরাদ্দ দেওয়া পণ্য উত্তোলন না করায় সরকারের দেওয়া ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় ২ লাখ সাধারণ মানুষ। টিসিবি’র পণ্যে লাভ হয় না, এমন অজুহাতে মালামাল উত্তোলন করেননি উপজেলার ডিলাররা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ওই পণ্য সমূহ ঊধ্বমূল্যে দোকান থেকে কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কোনো ধরনের মনিটরিং না থাকায় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে পণ্য উত্তোলন না করায় ডিলারশীপ বাতিলের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ উপজেলা লামা। ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় প্রায় দু’লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে আশি ভাগ মানুষই দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। এদিক চিন্তা করে রমজানের আগে তিনজন ডিলারের মাধ্যমে উপজেলার সাধারণ মানুষের জন্য ৬ মেট্রিক টন পণ্য বরাদ্দ দেয় টিসিবি। পণ্যগুলো হচ্ছে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি, ডাল ও খেজুর।
এ পণ্য বিক্রির জন্য আগে থেকেই উপজেলার তিনজন ডিলারও নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু টিসিবি পণ্যে লাভ হয় না এমন অজুহাতে এবারে পণ্য উত্তোলন করেননি ডিলাররা। অথচ ডিলার নিয়োগের শর্তে উল্লেখ আছে, একজন ডিলারকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতেই হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তদারকি না থাকায় ডিলাররা পণ্য উত্তোলন করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
লামা পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, মিজানুর রহমান, ফয়েজ উদ্দিন ও মো. ঈরাজসহ আরো অনেকে বলেন, বিগত সময়ে রমজান মাসে টিসিবির এসব পণ্য শহরের বিভিন্ন স্থানের দোকানে বিক্রি করা হতো। মানুষ কম দামে পণ্য পায় বলে লাইন ধরে এসব পণ্য কিনত। কিন্তু এবার তা বিক্রি হচ্ছে না। অথচ তুলনামূলক কম দামে এসব পণ্য পেলে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকৃত মানুষের উপকার হতো।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো ধরনের তদারকি দেখা যাচ্ছে না। ডিলাররা পণ্য বিক্রি না করলে তাদের ডিলারশিপ বাতিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
দিপাখা এন্টার প্রাইজের মালিক (ডিলার) সঞ্জয় কুমার দাশ সাংবাদিককে জানায়, টিসিবির বিভাগীয় কার্যালয় চট্টগ্রামে। সেখান থেকে এসব পণ্য লামা উপজেলায় আনতে হয়। পণ্য উত্তোলন ও চট্টগ্রাম থেকে নিতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই টিসিবির পণ্য উত্তোলন করিনি। তাছাড়া কমিশন বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
এদিকে ডিলার মাধুবী এন্টারপ্রাইজের মালিক রুপন মনি সেন বলেন, এবার আমি টিসিবির কোনো বরাদ্দপত্র পাইনি।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, এবার ডিলাররা টিসিবি পণ্য বরাদ্দের কোনো কপি জমা দেয়নি। তাই মনে হচ্ছে তারা টিসিবির পণ্য বিক্রি করছে না।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন