২১ জুলাই, ২০১৯ ২০:২৫

জামালপুরে পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি

জামালপুরে পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি এখনও বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বকশীগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন শিশুসহ ৪ জনের। বন্ধ রয়েছে জামালপুরের সাথে চার  উপজেলার রেল যোগাযোগ। 

টানা ৮দিন জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিগত সময়ে বিপদসীমার সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত তিনদিন ধরে যমুনার পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও খুব ধীরগতিতে কমায় এখনো বাহাদুরাবাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ৩দিন ফেরীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর রবিবার ১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলা ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নের প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে বন্যা পানি ছড়িয়ে পড়ছে সদর উপজেলার কেন্দুয়া, তুলশীরচর, লক্ষ্মীরচর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে। ১১ দিন ধরে যমুনার পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় দুর্গত এলাকায় ত্রাণের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তারা এখন কর্মহীন অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। এখনো বন্যা দুর্গত এলাকার অনেক জায়গায় ত্রাণ না পৌছানোর অভিযোগ করছেন দুর্গতরা। 

এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যা মোকাবেলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বন্যা কবলিতদের। 

এদিকে রবিবার বকশীগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে তিন শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তাজুল ইসলাম জানান, বকশীগঞ্জের  সূর্যনগর পূর্বপাড়া গ্রামের শাহীন মিয়ার শিশু কন্যা সুজুনী আক্তার(১১), একই গ্রামের সোলায়মান হোসেনের কন্যা সাথী আক্তার(৮) ও মাসুদ মিয়ার কন্যা মৌসুমী আক্তার(৮) বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে কলাগাছের ভেলায় উঠে খেলা করছিলো। খেলার সময় ভেলাটি হঠাৎ উল্টে ওই তিন শিশু পানিতে পড়ে যায়। 

এ সময় সুজুনী আক্তার ও সাথী আক্তার পানিতে ডুবে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় পানিতে হাবুডুবু খেয়ে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন মৌসুমী আক্তার। পরে স্থানীয়রা মৌসুমীকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে। বিকালে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কুতুবেরচর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ইয়াছিন মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া(২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়াও মেরুরচর ইউনিয়নের রবিয়ারচর গ্রামের আব্দুল্লাহ (৭০) নামে এক বৃদ্ধ তার ঘরের পেছনে বন্যার পানিতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে পড়ে যান। কিছুক্ষণ পর তার মৃতদেহ পানিতে ভেসে উঠে।   

এদিকে রবিবার দুপুরে জামালপুরের জেলা প্রশাসক তার সম্মেলন কক্ষে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। 

এ সময় জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর জানান, দুর্গত এলাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৯৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বেশিরভাগ বরাদ্দ ইতিমধ্যে বিতরন করা হয়েছে। বন্যার্তরা যাতে অনাহরে না থাকে সে বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।  সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক) এটিএম কামরুল ইসলাম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।   

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর