দখলে দূষণে মরে যাওয়া করতোয়া নদী আর গতি পাচ্ছে না। উদ্ধার অভিযানও থেমে গেছে। বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে ৩০ দখলদারের তালিকা করা হলেও সেই উচ্ছেদ অভিযানও শেষ হয়নি। মাঝে দুই একবার অভিযান পরিচালিত হলেও এখন আর কোন অভিযান দেখা যায় না। এদিকে নদীর পাড় দখলদারদের উচ্ছেদ না করায় দিন দিন বেড়েই চলেছে দখলদারের সংখ্যা।
জানা যায়, প্রায় ২০০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর গোড়া পত্তন হলেও সেই সভ্যতার সাথে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এরমধ্যে দখল আর ভরাটের কারণে এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে নদীটি।
বগুড়ার করতোয়া নদীটিতে একদিকে পানি শুন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখল এর ফলে নদীটি এখন মৃত। নদীটি শহরের ভেতরের অংশে যে যেখানে পেরেছে দখল ও ভবন নির্মাণ করেছে ইচ্ছেমত। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেই দখল করে নদীর ভেতরে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই স্থানে নদীর ভেতরে ঘিরে নিয়ে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। বর্তমানে বগুড়া শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার দখল আর দূষণে শুধু ড্রেনের কালো পানি দেখা যাচ্ছে।
দখল করা নদীর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিশাল বিশাল ভবন। সুযোগমত প্রভাবশালীরা নামে বেনামে নদীর তীর দখল করে নিচ্ছেন। জেলা শহরের এলাকায় নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ভবন। ভবনগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে নদীর বুকে। এছাড়া বগুড়া পৌরসভার প্রধান প্রধান ড্রেনগুলো মিলিত হয়েছে করতোয়া নদীতে।
বগুড়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, শহরের মধ্যে করতোয়া নদীর কয়েকটি স্থানে দখল হয়েছে। নদী দখল হয়ে যাওয়া স্থানে বাড়িঘর, ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দখল জমির পরিমাণ সাড়ে পাঁচ একর। করতোয়া নদী দখলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সর্বশেষ ৩১ দখলদারের নামের তালিকা তৈরি করা হয়।
বগুড়া শহরের বাসিন্দারা জানান, করতোয়া নদীটি শহরের চেলোপাড়া, ডিসি অফিসের সামনে, চানমারি ঘাট, ফতেহ আলী বাজার, উত্তর চেলোপাড়া, দত্তবাড়ি, জহুরুল ইসলাম ঘাট, নবাববাড়ি এলাকা, ফুলবাড়ি, মাটিডালিসহ প্রায় ২০ কিলোমিটার দখল হয়ে এখন মৃত। এইসব দখলকারিদের উচ্ছেদ করে নদীটির প্রবাহ ঠিক রাখার দাবি তাদের।
বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, করতোয়া নদীর দুই পাড়ে অবৈধ দখলকারিদের একটি তালিকা তৈরীর বিষয়ে জেনেছি। নদীতে প্রবাহ না থাকায় নদীটি শুকিয়ে গেছে। নদীর দুই পাড়ে সৌন্দর্য ও নদী রক্ষায় বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেটি একটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে অনুমোদন পেলে সেটির কাজ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল