উন্নয়নের নামে প্রকল্পের দায়সারাভাবে কাজ, কোনটির অর্ধেক আবার কোন প্রকল্পর কাজ না করেই টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পর মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হলেও শতভাগ কাজ না করেই সমুদয় বিল উত্তোলন করা হয়েছে। এমন সংবাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশের পর টনক নড়েছে সংশ্লিষ্টদের। তারা আবারো নতুন করে দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাবিটা ও টিআর-নগদ অর্থ প্রকল্পে এসব চিত্র দেখা গেছে।
বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির নন সোলার খাতে ২য় পর্যায়ে বগুড়া-৬ সদর আসনের জন্য ১৬০.৫৫৫ মে.ট. গম বরাদ্দ হয়। এ বরাদ্দের বিপরীতে উপজেলা পরিষদের উত্তর পাশের সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন গর্ত ভরাটসহ গোটা উপজেলা পরিষদের ভেতরে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। অপরদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর- নগদ অর্থ) কর্মসূচির আওতায় নন সোলার খাতে ৫২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২০ টাকা বরাদ্দ হয়। যার বিপরীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৫৯টি প্রকল্প দেয়া হয়। একই অর্থবছরে কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ৩য় পর্যায়ে নন সোলার খাতে ৭৫ মে: টন গম ও চাল বরাদ্দ হয়, সেখানে ৩টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এসব প্রকল্প বরাদ্দ দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। তদারকি করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম। সদর আসনের সংসদ সদস্য তৎকালীন সময়ে শপথ না নেয়ায় বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাদ্দের দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২য় পর্যায় ও মে মাসে ৩য় পর্যায়ের বরাদ্দ আসে। জুন মাসের মধ্যে এসব প্রকল্প সুসম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই ইতিমধ্যেই সমুদয় প্রকল্পর বিল উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন প্রকল্পে সরোজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
এসংক্রান্ত সংবাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশের পর টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। প্রথমে কর্তৃপক্ষ সকল কাজ শতভাগ দাবি করলেও তারা আবার কাজ শুরু করছেন।
সরেজমিনে বুধবার সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা পরিষদ কোর্টারের পশ্চিম-দক্ষিন পাশে ডাস্টবিন নির্মাণের কাজ চলছে। টিআর'র নগদ অর্থ থেকে উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে ময়লা রাখার ডাস্টবিন নির্মাণে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সেখানে ডাস্টবিনের কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। উপজেলা পরিষদের শিশু পার্ক সংস্কারের নামে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও সেখানে শুধু মেঝে সংস্কার করা হয়েছিল। সংবাদ প্রকাশের পর সেই শিশু পার্কে থাকা দুটি দোলনা ও একটি স্লিপার রং করে সংস্কার করা হয়েছে।
প্রকল্পর মেয়াদ শেষে সংস্কার বিষয়ে বগুড়া জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, জুন মাসের মধ্যে সব প্রকল্পর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। সব প্রকল্পর বিল দেয়া হয়েছে। এটা পরেও করা যায়।
এদিকে নামুজা নাথপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের মাঝখানে একটি বিশাল আয়তনের পুকুর লিজ দিয়ে প্রাপ্ত টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দিয়ে তারা পুকুর সংস্কার করেছে। অথচ সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান কর্তৃক বরাদ্দকৃত কাবিখা কর্মসূচির আওতায় এখানে ৩৫ মে. ট. চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। এই চাল কোথায় গেল তা আশ্রয়নবাসী জানে না। এ যেন পুকুর সংস্কারের নামে পুকুর চুরি। পুরো টাকা লোপাট করা হয়েছে।
আশ্রয়ন প্রকল্পর পুকুর সংস্কার না হওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে আশ্রয়নবাসী বলার কারণে তাদেরকে উপজেলা পরিষদে ডেকে আনা হয় সূত্রে জানা গেছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার