কুমিল্লায় ব্ল্যাক রাইসের (কালো রঙের চাউলের ধান) চাষ বাড়ছে। গত বছর পাঁচ শতক জমিতে চাষ করা হলেও ১৫ জন কৃষক এবার ১৫শ’ শতক জমিতে ব্ল্যাক রাইসের চাষ করেছেন। কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনাগ্রাম মাঠে এই ধানের চাষ করা হচ্ছে। এই চালের ভাত ডায়াবেটিস রোগীরা খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মনাগ্রামের কৃষক মনজুর হোসেন প্রথম পাঁচ শতক জমিতে কালো ধান চাষ করেন। এবার তিনিসহ ১৫জন কৃষক ব্ল্যাক রাইসের চাষ করেন। ঢাকায় বিদেশি কোম্পানি গুলো এই চাল হাজার টাকায় কেজি বিক্রি করলেও স্থানীয় কৃষকরা তা তিনশত টাকায় বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মনাগ্রামের মাঠে বেগুনি ও সবুজ ধানের চারা বাতাসে দোল খাচ্ছে। মাঠে ভারতের আসাম, ইন্দোনেশিয়া, চায়না, জাপান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সাত প্রকার কালো চালের ধান লাগানো হয়েছে। চাল কালো হলেও সবগুলো ধানের পাতার রঙ বেগুনি নয়। অনেক গুলো সবুজ রঙের।
কৃষক মনজুর হোসেন বলেন,কৃষি গবেষক ড.আখতার হামিদ খান ধান উৎপাদনে কুমিল্লার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। ড.আখতার হামিদ খানের কাজ দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কালো চাল ডায়াবেটিস,¯স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন,ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। তাই কালো চাল উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন। অনেকে বিদেশ থেকে উচ্চ দামে চাল কিনে খায়। তিনি বিভিন্ন দেশের সাত প্রকার কালো চালের ধান সংগ্রহ করে চাষ করছেন। কালো চাল উৎপাদন বাড়লে কৃষিতে নতুন গতি আসবে বলে তিনি মনে করেন।
সেবাধর্মী সংগঠন রোটারী ক্লাব অব কুমিল্লার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন,কালো চাল অনেক বেশি উপকারী। তবে কুমিল্লায় এই চালের ধান ভাঙ্গানোর মেশিন নেই। মেশিনসহ অন্যান্য সহযোগিতা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
এবিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বছরব্যাপী ফল প্রকল্পের পরিচালক ও ধান গবেষণায় বিশেষজ্ঞ ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, কালো চালের ভাত সাধারণ ভাতের অধ্যেক খেলে পেট ভরে যাবে। ফাইবার বেশি থাকায় তা সময় নিয়ে হজম হবে। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী। এদিকে যাদের পেটে চর্বি রয়েছে তাদেরও উপকার হবে। কৃষক মনজুর হোসেনের কালো জাতের ধানের চাষ সারা দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম। আমি ইন্দোনেশিয়া থেকে কালো ধান এনে তাকে ২৭টি দিয়েছিলাম। সে সেখান থেকে বীজ তৈরি করে ধানের পরিমাণ বাড়িয়েছে। কালো চালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) অনেক কম। জিআই যত কম হয় সেই খাবার শরীরে জন্য তত উপকারী। গ্লুকোজের জিআই ১০০ভাগ, চিনির ৮০ভাগ, সাদা চালের ভাতের ৭২ ভাগ, গমের আটার রুটিতে ৬৫ ভাগ আর কালো চালের জিআই মাত্র ৪২ ভাগ। কালো চালের বিষয়টি দেশে গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে। কৃষিমন্ত্রীও এই চাল উৎপাদনে তাগিদ দিয়েছেন। কালো চাল ভালো উৎপাদন হলে রোগ প্রতিরোধের সাথে তা কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার