শিরোনাম
১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:২৩

কেন্দ্রের সামনে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পরীক্ষা দেওয়া হলো না মাহিবুলের

নাটোর প্রতিনিধি

কেন্দ্রের সামনে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পরীক্ষা দেওয়া হলো না মাহিবুলের

স্কুলের ভেতরে তখন সবে মাত্র শুরু হয়েছে প্রাথমিক সমাপনী ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। বাইরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা আবার বসে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু স্কুল ফটকের বাইরে একটা ছেলের মনমরা হয়ে বসে থাকার দৃশ্য নজর এড়াতে পারেননি অনেকে। ভেতরে পরীক্ষা চলছে অথচ মূল ফটকে ছেলেটি যে স্কুলড্রেস পরিহিত অবস্থায় বসে আছে। সামনে যেতেই শিশুটির বাবা কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে তাকে। কিন্তু কিছুতেই বোঝাতে পারছে না তাকে। এরপর বেরিয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন না করলেও বন্ধুদের সঙ্গে ছেলেটি যে পরীক্ষা দিতে চায়। রবিবার নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পেড়াবাড়ীয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নওশেরা মহল্লার কামরুল আহসান খানের একমাত্র সন্তান মাহিবুল। অন্য শিশুদের মতো তাদের সন্তানটি স্বাভাবিক না হলেও মাহিবুল পড়াশোনা করতে চায়। ছেলের এই আগ্রহ দেখে অন্য শিশুর মতো মাহিবুলকেও স্কুলে ভর্তি করেন তারা। অন্য বন্ধুদের মতো সেও নিয়মিত লেখাপড়া ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ড. এমদাদ খান ও ছেতেরা খান কৃষি ও কারিগরি অর্কা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিইসি পরীক্ষার্থীদের সাথে মাহিবুলও বিদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য যে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় সেটা করেনি মাহিবুল। 

শিশুটির বাবা জানান, রবিবার প্রথম পরীক্ষার দিন সে অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে বলে নিজেকে প্রস্তুত করে তোলে। এরপর তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাবার জন্য বাবা-মাকে জোরাজুরি শুরু করে। অবশেষে সন্তানের আবদার রাখতে তার বাবা তাকে নিয়ে আসেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী এই শিশুটি পরীক্ষার জন্য যে রেজিস্ট্রেশন‌ করা হয়নি। ফলে ছেলের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারার‌ও প্রশ্ন আসে না। তাই সে পরীক্ষা কেন্দ্রের মূল ফটকে অশ্রু ভেজা চোখে পরীক্ষার পুরো আড়াই ঘণ্টা সময় কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে কাটিয়ে দেয়। আবার যখন সবাই পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি যায় তখন সেও বাড়ি ফেরে।

মাহিবুল জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী জানিয়েছে তার বাবা কামরুল আহসান খান আরো জানান, তবে তার লেখাপাড়ার আগ্রহ অনেক বেশি। সে আর দশজন স্বাভাবিক ছেলেদের মতোই স্বাভাবিকভাবে লেখাপড়া শিখতে চায়। তার চিকিৎসার ব্যাপারে বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে তার সন্তানের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর