দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আগামীকাল রবিবার শেষ হচ্ছে প্রচারণার সময়। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে ভোট। একমুহূর্তও নষ্ট করার সুযোগ নেই। তাই গতকাল ছুটির দিনেও জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা।
হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে নানান প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন। প্রার্থীদের কেউ কেউ ডলার বা টাকার আদলে, কেউ বিভিন্ন প্রাণী বা বস্তুর আকৃতির লিফলেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। থেমে নেই অনলাইনেও প্রচারণা। নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানে আগ্রহী করতে আগামীকাল বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে সচেতনমূলক সভা করবে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ভোট প্রদানকে ঘিরে একটি টিউটোরিয়াল ভিডিও প্রকাশ করেছি। সেখানে দেখানো হয়েছে, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কীভাবে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করবেন এবং ভোট প্রদান শেষে ব্যালট বাক্সে ফেলবেন। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাঁরা প্রথম ভোট দেবেন। তাঁদের আগ্রহী করতে এবং পুরো ভোটিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে উৎসাহিত করতে আগামীকাল বেলা ১২টায় সব ফ্যাকাল্টি এবং ইনস্টিটিউটে মোট চারটি সচেতনতামূলক সভা করা হবে। সেখানে আমাদের কমিশনের পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের ভোট প্রদান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।’ সাইবার বুলিং প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা বৃহস্পতিবার শক্ত বার্তা দিয়েছি এবং বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আমরা কয়েকটি পেজের অ্যাডমিনকে ডেকেছি এবং তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। অনেকে তাদের পেজ বন্ধও রেখেছে। তবে কথা না শুনলে আমরা হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে যাব।’
সরে দাঁড়ালেন জিএস প্রার্থী মাহিন সরকার : গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন বহিষ্কৃত এনসিপি নেতা ও ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী মাহিন সরকার।
মাহিন সরকার বলেন, ‘শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় সব জায়গায় গণ অভ্যুত্থানের শক্তিসমূহের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে গণ অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে, তারা যে কারও চাইতে শিক্ষার্থীদের প্রতি বেশি দায়বদ্ধতা অনুভব করবেন এবং অধিকতর কাজ করবেন। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হচ্ছে, আবু বাকের মজুমদার গণ অভ্যুত্থানের একজন অগ্রসনানী, আমার স্নেহধন্য ছোট ভাই যদি জিএস পদে নির্বাচিত হতে পারে সেটি আমার বিজয় বলে সূচিত হবে।’
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে জুমার নামাজ আদায় করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম। নামাজ শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি।
এ সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামিম-মায়েদ’ প্যানেল অন্য কোনো প্যানেলের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না। শিবিরকে ঠেকাতে ছাত্রদল, স্বতন্ত্র ও বাম সংগঠনগুলোর জোট হতে পারে বলে ফেসবুকে গুঞ্জন চলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের আবিদুল ইসলাম বলেন, এমন কোনো গুঞ্জন শুনে থাকলে তা ভিত্তিহীন। আমাদের প্যানেল কারও সঙ্গে জোট করবে না। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম। নামাজ শেষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে প্রচারণায় অংশ নেন শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম। এ সময় সাদিক কায়েম বলেন, শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। আমরা নির্বাচিত হলে আবাসন সংকট সমাধানে গুরুত্বারোপ করব। শিক্ষার্থীরা যেন নির্দ্বিধায় ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। সূর্যসেন হলে নামাজ আদায় করার পর প্রচারণায় অংশ নেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের।
এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাব, শিক্ষার্থীদের ডাকসুমুখী করতে এবং ভোটে উৎসাহী করতে যত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার আপনারা সেটি করুন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে এ ডাকসুকে কার্যকর করুন এবং শিক্ষার্থীদের বলব, আপনারা আপনাদের যোগ্য প্রতিনিধি নির্ধারণ করুন, যেন কেউ এই শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।