কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিনেও স্থানীয়দের প্রবল বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরে অভিযান স্থগিত করা হয়। গতকাল সকাল থেকে নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়ার অংশে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
সকালে বুলডোজার নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। কিন্তু তার আগেই শহরের প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কে শত শত স্থানীয় মানুষ নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। চার রাস্তার মোড়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিমানবন্দর সড়কে ঠেলাগাড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়।
অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার আলোচনা করলেও তারা সরতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের দাবি, এ উচ্ছেদ অবৈধ, কারণ খতিয়ানভুক্ত জমিতে খাজনা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বসবাস করছেন। প্রাণ দিলেও উচ্ছেদ মানবেন না। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা আটকা পড়েন। এতে প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুর, সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, রিয়াজ মোহাম্মদ শাকিলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।
পরে বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে। বুলডোজার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছু হটলে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা সরে যান। দুপুর ১২টার পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। সোমবার শুরু হওয়া এ উচ্ছেদ অভিযানে প্রথম দুই দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম চললেও তৃতীয় দিনে বাধার মুখে অভিযান বন্ধ থাকে। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা ও প্রতিবন্ধকতার ঘটনায় পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে, যেখানে ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। চতুর্থ দিন আংশিক অভিযান চালানো হয়। তবে পঞ্চম দিনে পুরোপুরি বন্ধ থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। ১০ থেকে ১২ বছরে এখানে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। তালিকায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালীর নাম রয়েছে।