১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ১৫:৫৪

মার্শাল আর্টে বহু পুরস্কার পাওয়া প্রতিবন্ধী নাসির কাজ চান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

মার্শাল আর্টে বহু পুরস্কার পাওয়া প্রতিবন্ধী নাসির কাজ চান

চাইনিজ মার্শাল আর্ট উশু, ইন্দোনেশিয়ান পেনতাক সিলাত, ইন্ডিয়ান সিলাম বাম, পৃথিবীর প্রথম মার্শাল আর্ট জাপানি জুজুৎসু ও জাপানি কারাতে মার্শাল আর্ট-এই পাঁচ রকম মার্শাল আর্টে দক্ষ নাসির উদ্দীন। রাজশাহীর পবা উপজেলার রাজপাড়া থানাধীন শিলিন্দা বাড়ইপাড়া গ্রামের নাসিরের রয়েছে চারটি জাতীয় ও একটি জেলা পর্যায়ের পদক। 

তিনি ২০১৮ সালে শেখ কামাল স্মৃতি আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট রৌপ্য পদক, ২০১৩ সালে ওয়েস্টার্ন সিটি পেনতাক সিলাম স্বর্ণপদক, একই বছর গ্র্যান্ড মাস্টার পি. সিলভারাজ সিলামবাম তাম্র পদক, সিনিয়র ক্লাব কারাতে রৌপ্য পদক, ২০১৩-১৪ সেশনে জেলা উশু প্রতিযোগিতায় সানডা ইভেন স্বর্ণপদক লাভ করেন।

তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো নাসির একজন অর্ধ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এক চোখে দেখতে পান না। তারপরও এতগুলো ক্যাটারগরিতে মার্শাল আর্ট করতে পারেন। আর সেটাও কোন প্রতিবন্ধীর সঙ্গে নয়, স্বাভাবিক মানুষদের সঙ্গে।

দক্ষ খেলোয়াড় ও এত পুরস্কার পাওয়ার পরেও বহু কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে। কারণ এসব প্রতিযোগিতায় নিজ খরচে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। আর পুরস্কার ‘পদক’ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এর কোনো প্রাইজ মানি নেই। 

শুধু খেলা দিয়ে তো আর জীবন চলে না। তাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বড়বোন ও স্ত্রী-কন্যার সংসার চালাতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন নাসির। সেটাও অনিয়মিত। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে প্রতিদিন কাজ পান না। শ্রমিক সঙ্কট থাকলে তবেই কাজ মেলে তার। 

নাসিরের স্ত্রী রেহানা পারভীন বলেন, ‘মাসের ১০ দিন কাজ হলে ২০ দিন তাকে বসে থাকতে হয়। ১০ দিনের টাকা দিয়েই চালাতে হয় পুরো সংসার। তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বড়বোনের চিকিৎসা, সংসারের খরচ সবই চালাতে হয়। মেয়েটা অসুস্থ, তাকে ডাক্তার দেখাতে পারছি না। ঘরের ছাদ নেই, বৃষ্টির দিনে পানি পড়ে।’ 

নাসির জানান, কারও কাছে কখনও কোনো রকম সহযোগিতা পাননি। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করেন তিনি। উপজেলার হড়গ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যয় প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে নিজে গ্রহণ না করে অন্যদেরকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। 

শত অভাব ও প্রতিকূলতার মধ্যেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন নাসির। তার এই শিক্ষাগত যোগ্যতা ও খেলাধুলার বিশেষ অভিজ্ঞতা নিয়ে চাকরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন। একবার মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় ভাল করলেও তার চাকরি হয়নি। যদিও চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবন্ধী কোটা ও প্রার্থীদের বিশেষ অভিজ্ঞতা, খেলাধূলা, স্কাউট ও অন্যান্য সনদ থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া কথা বলা হয়। 

নাসিরের মার্শাল আর্ট শিক্ষক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উশু কোচ শরিফুল ইসলাম বলেন, নাসির ২০০০ সাল থেকে মার্শাল আর্ট করে। বিভিন্ন জাতীয় প্রতিযোগিতায় আনসার, আর্মি, বিজিবি, নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পুরস্কার অর্জন করেছে। সে খুবই কষ্টে জীবনযাপন করে। দক্ষতা, খেলোয়াড় ও প্রতিবন্ধী কোটায় তার একটি চাকরি হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সে হয়তো একটু ভালভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। 

নাসিরের প্রতিবেশী পারুল বলেন, ‘আমাদের নাসির প্রতিবন্ধী। সে খেলাধুলা করে। তার বোনও প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী হওয়াতে তার স্থায়ী কোনো কর্মসংস্থান নাই। অনেক কষ্টে সে সংস্থার চালায়। তার কোন চাকরি হলে খুবই ভালো হতো।’

প্রতিবন্ধী কোটায় নাসিরের সরকারি চাকরির বয়স আছে আর ৬ মাস। এখনও কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান না হওয়ায় উদ্বিগ্ন তিনি। কেননা ৬ মাস পার হলেই ‘পদক’ আর ‘সনদ’ ঘরে সাজিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর