২০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৮:০০

নেত্রকোনায় ইউপি চেয়ারম্যান লোকমানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনায় ইউপি চেয়ারম্যান লোকমানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

সরকারি সহায়তার চাল ইউনিয়ন পরিষদের বিতরণ না করে নিজ বাড়িসহ অন্য জায়গায় বিতরণ করেন। ভূয়া নামে টিউবওয়েল স্থাপন দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন। ভিজিএফের কার্ডে নাম দিয়ে চাল আত্মসাত। উন্নয়ন প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করেই আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীর মেন্দীপুর ইউপি সদস্যসহ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

মেন্দিপুর ইউনিয়নের বেশ কটি গ্রামের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, বিভিন্ন সরকারি সহায়তার বরাদ্দ আসলে তা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে না দিয়ে চেয়ারম্যান লোকমান হেকিমের বাড়ি অথবা নাওটানা ঘাট থেকে গিয়ে আনতে হয়। যে কারেণ বয়স্ক নারীরা ও প্রতিবন্ধীরা এতদূর হেঁটে যেতে পারেন না। যেতে আসতে দেড়শ টাকার চাল পেলে তার সবটাই খরচ হয়ে যায়।

গ্রাম ভিত্তিক বরাদ্দে বৈষম্য, সংরক্ষিত সদস্যসহ জনসাধারণের সাথে অসদাচরণসহ চেয়ারম্যানের ওয়াটার লর্ড আধিপত্য বিস্তার। কর্মচারীদের হামলা মামলায় হয়রানিসহ এসকল বিভিন্ন কার্যক্রমে ইউপি সচিব মুছা মিয়া ও সদস্য আবুল কালামের সহায়তা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
 
এ সকল ঘটনায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী মানিক মিয়া, কোকিলা বেগম, শাহজাহান মিয়াসহ দরিদ্র বেশ কয়েকজনের নাম ভিজিএফ তালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা বাস্তবে এসবের মুখ দেখেননি মর্মে আদালতে এফিডেভিট করেছেন। বোয়ালী কুড়ের ফেরি পারাপারে টাকা আত্মাসাত করায় মাঝি সাজেদুল ইসলামও এফিডেভিট করেন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মেন্দীপুর গ্রামের অস্তিত্বহীন রহিছ মিয়া নামে টিউবওয়েল বরাদ্দের টাকা উত্তোলিত হলেও এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

২০১৮-১৯ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মেন্দীপুর হাওর সড়কে মাটি ভারাটে ৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকার বরাদ্ধ দেয়া হয় প্রথমে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শাহিনুর আক্তারকে। কিন্তু বরাদ্দের বিনিময়ে চেয়ারম্যান তার কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি ৪০ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে কাজটি কালাম মেম্বারকে দিয়ে দেন বলে জানান ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য শাহীনুর। কিন্ত কাজটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি যেখান থেকে কাজ করার কথা সেখান থেকে কিছুটা দূরে জনগণের দেখানো পথেই করেছেন। চেয়ারম্যান আমাকে দিয়েছে আমি করেছি। সেই সাথে তার এলাকার অস্বিত্বহীন টিউবওয়েলের কথাও তিনি জানেন না বলে জানান। 

এ ব্যাপারে সচিব মুছা মিয়ার মুঠোফোনে কথা বললে তিনি নানা পরিচয় তুলে ধরে বলেন, আসেন পরিষদে বসে কথা বলি। এগুলো ফোনে বলা যাবে না। 

এদিকে, ২০১৪ থেকে ১৯ পর্যন্ত মেন্দীপুর ইউনিয়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে ইউপি সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। পরবর্তীতে ইউপি সচিব মুছা মিয়ার দায়ের করা জন্মনিবন্ধনের টাকা আত্মসাত মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন রফিকুল। 

ইউপি চেয়ারম্যান লোকমান হেকিম অভিযোগকারী নারী ইউপি সদস্যকে খারাপ মহিলা উল্লেখ করে বলেন। আমি অনেক দিনের চেয়ারম্যান। উদ্যোক্তা রফিকুলকে হিসাব নিকাশে চাপ দিয়েছিলাম। সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। পরে একটা স্বাক্ষর জাল করে টাকার নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি এখন সে জেলে আছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হোক। 

এদিকে, খালিয়জিুরি ইনএনও এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম জানান, চেয়ার‌্যানদের সাথে ইউএনওদের একটা সম্পর্ক থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরও এর বাইরে গিয়ে রিপোর্ট হওয়ার পর দেখছি খোঁজ নিয়ে। মোটামুটি কাজ ভালই হয়েছে। আমি আসার আগে কি হয়েছে জানি না। 


বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর