১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:৪৩

নাটোরে অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান প্রকল্পে হরিলুট

নাটোর প্রতিনিধি:

নাটোরে অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান প্রকল্পে হরিলুট

নাটোরের সাত উপজেলায় অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের ৪০ দিনের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সব উপজেলাতেই এ কর্মসূচিতে কমবেশি অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সব থেকে বেশি খারাপ অবস্থা বড়াইগ্রাম, লালপুর, বাগাতিপাড়া ও গুরুদাসপুরের। 

হাজির না থাকলেও শ্রমিকদের ভুয়া নাম ব্যবহার করে কর্মসূচির টাকা আত্মসাৎ করছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে সাত উপজেলায় মোট ২৫২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরিতে মোট ১১ হাজার ৬৯৪ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা। 

কিন্তু জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বলছে, গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামতের পাশাপাশি অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নেয়া এ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকায় কাজ না করেও ভুয়া শ্রমিকদের নামে তুলে নেয়া হচ্ছে টাকা। 

গত ৯ ডিসেম্বর নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় চলছে কাচা রাস্তা নির্মাণের কাজ।ইউএনও দেখতে পান, এখানে মোট ৩৩ শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২১ জন। এরপর তিনি ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের নারায়ণপুরে গিয়েও দেখতে পান একই চিত্র। মোট ৩৩ শ্রমিকের মধ্যে সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ছয়জন। 

ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্মসূচির কাজ পরিদর্শনে যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই শ্রমিকদের অনুপস্থিতিসহ নানা অনিয়ম পাচ্ছেন। তাছাড়া যে কাজ হচ্ছে তার মানও সন্তোষজনক নয়। শুধু তিনিই নন, কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকও প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে একই অনিয়ম দেখতে পেয়েছেন। তিনিও চলমান এ প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিন লালপুরের কদমিচিলান এলাকায় একটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, সেখানে গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের জন্য দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে মোট ৪১ জনের কাজ করার কথা। কিন্তু কাজ করছেন মাত্র ১৩ জন। এ সময় সোহেল রানা নামে এক শ্রমিক বলেন, গ্রামে এখন ধান কাটার সময়। ধান কেটে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ টাকা পাওয়া যায়। তাই অনেকেই ২০০ টাকায় গড় হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করতে চায় না। ফলে তারা অনুপস্থিত রয়েছে। লালপুরের মতো অতিদরিদ্রের এ প্রকল্পে বেশি অনিয়ম হচ্ছে বড়াইগ্রাম, বাগাতিপাড়া ও গুরুদাসপুরে।

বড়াইগ্রামের বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুর রাজ্জাক কিছুদিন আগেও লালপুরের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তার দুর্বল তদারকির কারণেই এসব প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। আর বড়াইগ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় অতিদরিদ্রের এ কর্মসংস্থান প্রকল্পে হরিলুট চলছে। যদিও বড়াইগ্রাম উপজেলার পিআইও আব্দুর রাজ্জাক প্রকল্পে অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।

নাটোর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের এ প্রকল্পগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ভরা। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরাই অনিয়ম করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে। দেখা যাচ্ছে, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামের প্রভাবশালীরা ভুয়া শ্রমিকদের নাম দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে সরকার যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পগুলো পরিচালনা করছে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলাউদ্দিন বলেন, বর্তমানে লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন অন্য উপজেলার পিআইও। ফলে প্রকল্পগুলোর তদারকিতে কিছু অনিয়ম হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ বলেন, অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমিও অনিয়ম পেয়েছি। এসব অনিয়ম বন্ধের পাশাপাশি কঠোরভাবে প্রকল্প তদারকির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর