ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবজি চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষক মহিউদ্দিন মিয়া। সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে ২৫ বিঘা জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন সবজির বাগান।
কৃষক মহিউদ্দিন মিয়া মোহাম্মদপুর গ্রামের ফজলুর রহমান মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তার বাগানের উৎপাদিত সবজি জেলার বিভিন্ন বাজারসহ আশপাশ জেলাতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
চলতি বছর মহিউদ্দিন মিয়া তার ২৫ বিঘা জমিতে টমেটো, পেঁপে, লাউ, ফুলকপি, করলা, ব্রকুলি (সবুজ ফুলকপি), জিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কেকসিকাম (সালাতের মরিচ), বাঁধা কপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছেন। তার বাগানে বর্তমানে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।
সদর উপজেলা কৃষি অফিস ও মোহাম্মদপুর গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০০৮ সালে কৃষক মহিউদ্দিন একই গ্রামের তার বন্ধু জামাল মিয়ার সাথে যৌথভাবে ৫ বিঘা জমিতে সবজির চাষ শুরু করেন। শুরুর দিকে মহিউদ্দিন মিয়ার তেমন পুঁজি ছিল না। তিনি স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তার বন্ধু জামাল মিয়ার ছিল ৫০ হাজার টাকা পুঁজি। দু’জনের ৮০ হাজার টাকায় ৫ বিঘা জমিতে সবজির চাষ শুরু করেন। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় পরের বছর থেকে তারা গ্রামের কৃষকের জমি ভাড়া (জমা) নিয়ে সবজির বাগানের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। নিজেদের তৈরি জৈব ও কেচু সার তার সবজির বাগানে ব্যবহার করেন। এতে তাদের বাগানের ফলন ভালো হয়।
এভাবে জামাল মিয়ার সাথে কয়েক বছর যৌথভাবে সবজি চাষ করার পর চলতি বছর মহিউদ্দিন মিয়া নিজের জমি ও গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে মোট ২৫ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেন। মহিউদ্দিন মিয়ার বাগানে বর্তমানে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।
সবজি বাগানের মালিক মহিউদ্দিন মিয়া জানান, ২০০৮ সালে তিনি ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গ্রামের জামাল মিয়ার সাথে যৌথভাবে সবজির চাষ শুরু করেছিলেন। সবজির ব্যবসা ভালো হওয়ায় চলতি বছর যৌথ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে নিজের এবং গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে ২৫ বিঘা জমিতে সবজির চাষ করেন। এ সব জমিতে বর্তমানে টমেটো, পেঁপে, লাউ, ফুলকপি, করলা, ব্রকুলি (সবুজ ফুলকপি), জিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কেকসিকাম (সালাতের মরিচ) চাষ করেছি।
তিনি বলেন, তার খামারে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকদের বেতন দিয়ে বছরে তার প্রায় ৬/৭ লাখ টাকা লাভ হয়।
সবজি চাষী মহিউদ্দিন মিয়া আরও বলেন, বাজারে তার বাগানের টমেটোর খুব চাহিদা আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা এসে তার বাগান থেকে পাইকারী দামে সবজি কিনে নিয়ে যায়। সবজি বাগান দেখে এলাকার যুবকরাও সবজি চাষে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রামের আরও ১২ জন যুবক সবজি চাষ শুরু করেছে। বেকার যুবকরা যদি যুব উন্নয়ন বা অন্য কোন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন তাহলে দেশের বেকার সমস্যা থাকবে না। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবজি তখন বিদেশেও রফতানি করা যাবে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মুন্সি তোফায়েল হোসেন জানান, সদর উপজেলার ৬৫০ হেক্টর জমিতে এবছর সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষে কৃষকরা খুবই লাভবান হচ্ছে। কৃষকরা দিনদিন আগ্রহী হচ্ছেন। মোহাম্মদপুর গ্রামের মহিউদ্দিন মিয়ার সবজির বাগানসহ অন্যান্য সবজির বাগানগুলো তিনি নিয়মিত তদারকি করেন। এ সব সবজির বাগানে জৈবসার ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর শীত মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম