যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নগ্ন করে হাত-পা মুখ বেঁধে ব্লেড দিয়ে পুরো শরীর চিঁড়ে লবণ লাগিয়ে ঘরে আটকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে মাতাল স্বামী খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে স্বামীর নির্যাতনে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হন গৃহবধূ নুরন নাহার।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ নুরন নাহার লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা গ্রামের খায়রুল ইসলামের স্ত্রী।
হাসপাতাল ও নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবার জানায়, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সরলখাঁ গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে নুরন নাহারের সাথে গত দুই বছর আগে বিয়ে হয় বাগডোরা গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খায়রুল ইসলামের। বিয়ের পর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থল রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ ব্যাংক মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন পোশাক শ্রমিক খায়রুল ইসলাম। প্রথম দিকে সম্পর্ক ভাল থাকলেও কিছুদিন পর কারণে-অকারণে শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের সময় নেয়া যৌতুকের এক লাখ টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করে পুণরায় ২০ হাজার টাকার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন।
নুর নাহার সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। চাহিদামত টাকা না পেয়ে মদ্যপ খায়রুল কিছু দিন আগে স্ত্রীর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাগ্য জোরে বেঁচে যান নুর নাহার।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিপিএল ক্রিকেট জুয়ায় সর্বস্য হারিয়ে রাতে বাসা ফিরেন মদ্যপ খায়রুল। এ সময় বাসার দরজা খুলে দিতে বিলম্ব হওয়ার অজুহাতে স্ত্রী নুরন নাহারকে নগ্ন করে হাত পা বিছানার খাটের সাথে বেঁধে ব্লেড দিয়ে গোপনাঙ্গ ও বক্ষদেশসহ পুরো শরীর চিঁড়ে লবণ লাগিয়ে দেয়। এ সময় চিৎকার দিলে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে রাখেন স্বামী খায়রুল।
ভোরে স্বামী খায়রুল ঘুমিয়ে পড়লে কৌশলে হাত পায়ের রশি খুলে বাসা থেকে বেড়িয়ে বাসে উঠে রবিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে লালমনিরহাট পৌছে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন গৃহবধূ নুরন নাহার। সেখানে তৃতীয় তলার ৫৯ নম্বর বেডে ব্যথায় ছটফট করছেন তিনি।
হাসপাতালের বেডে গৃহবধূ নুর নাহার বলেন, জুয়া খেলায় টাকা হারিয়ে ইয়াবা সেবন করে এর আগেও একদিন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কান ফাঁটিয়ে দেন এবং বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন স্বামী খায়রুল। শুক্রবার রাতেও কোনো কারণ ছাড়াই হাত-পা মুখ বেঁধে নগ্ন করে পুরো শরীর ব্লেড দিয়ে চিঁড়ে লবণ লাগিয়ে দেন। এ কথা বলেই হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।
নুর নাহারের বাবা কৃষক নুর ইসলাম জানান, বিয়ের সময় যৌতুক বাবদ এক লাখ টাকা ছাড়াও একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য মাঝে মধ্যে সাধ্যমত জামাইকে টাকা দিতাম। কিন্তু এরপরও সে আমার মেয়েকে অমানুষিক বে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে। মেয়ে সুস্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তিনি নারীবাদী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনা বেগম বলেন, নুর নাহারের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগবে।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম জানান, ঘটনাস্থলে (ঢাকার কেরানীগঞ্জে) অভিযোগ দেয়ার নিয়ম হলেও এ বিষয়ে কেউ তাকে জানাননি। তবুও নির্যাতিত গৃহবধূর খোঁজ খবর নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম