দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের মতো যশোরও গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীতে জুবুথুবু হয়ে আছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ এর মধ্যে ওঠানামা করছে। গত রবিবার ডিসেম্বর তো যশোরে ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার সাথে ঠাণ্ঠা হিমেল হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এখানকার সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। দিনের বেলা কাজের সন্ধানে বাইরে বের না হলে যাদের আহার জোটে না।
মৌসুমের প্রথম শৈত প্রবাহ হওয়ায় গরম কাপড় বিতরণও সেইভাবে প্রথম থেকে শুরু হয়নি। যদিও শেষ দিকে যশোর জেলা প্রশাসন এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিছু কম্বল বিতরণ করেছে। কিন্তু প্রতিবারই যেটা দেখা যায় যে, বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা সংস্থা যখন গরম কাপড় বিতরণ শুরু করে, ততদিনে মানুষ গরমে ঘামতে শুরু করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না, তেমনই লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।
তবে এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গতবারের মতো এবারও যশোরের ফেসবুক গ্রুপ বনিফেস শীতের শুরুতেই তাদের ‘শীত নিবারণ বৃক্ষ’ রোপন করেছে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায়। প্রতীকি এ শীত নিবারণ বৃক্ষে স্বচ্ছল মানুষেরা প্রতিদিনই তাদের অব্যবহৃত গরম কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। দুস্থ শীতার্ত মানুষেরা যার যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী কাপড় এ শীতবৃক্ষ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। দড়াটানা পুলিশ বক্সের পাশেই এ শীত নিবারণ বৃক্ষের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়াতেই দেখা গেল বেশ কিছু ক্ষুদে শিক্ষার্থী তাদের অব্যহৃত পোশাক শীত নিবারণ বৃক্ষে রেখে চলে গেল। শীতে কাহিল বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল শীত নিবারণ বৃক্ষ থেকে তাদের নিজেদের সাইজের পোশাক বাছাই করছেন।
বনিফেসের সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, এবার গত ১১ ডিসেম্বর দুপুর থেকে এই শীত নিবারণ বৃক্ষের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) তৌহিদুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন। গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক দুস্থ নারী, পুরুষ, শিশু এই বৃক্ষ থেকে কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গত বছর প্রথম তারা এই আইডিয়াটি চালু করেন। সেবার তিনমাস চালু ছিল। ওই সময়ে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পিস কাপড় এই বৃক্ষ থেকে নিয়ে যায় ছিন্নমুল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। গতবারের তুলনায় এবার মানুষ এখান থেকে কাপড় নিচ্ছে অনেক বেশি। তবে এবার অনেক বেশি মানুষ উৎসাহী হয়ে এখানে কাপড় দিচ্ছেনও।
বনিফেসের আরেক সদস্য শিমুল বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শীত নিবারণ বৃক্ষ থেকে কাপড় দেয়া-নেয়া হয়। যাদের দেয়ার সামর্থ আছে তারা নিজ উদ্যোগেই এখানে কাপড় রেখে যাচ্ছেন। যারা নেয়ার মতো, তারা নিয়ে যাচ্ছেন।
যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার আব্দুল হক বলেন, তাদের এই আইডিয়া খুবই চমৎকার। আমি এবার সেখানে ১৫টি কাপড় দিয়েছি’। যশোর বিদ্রোহী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর শীত নিবারণ বৃক্ষে ৫টি কাপড় দিয়েছিলাম। এবার ১০টি কাপড় দিয়েছি। আরও দেওয়ার ইচ্ছা আছে’।
যশোর সরকারি এমএম কলেজের ছাত্রী ফাতেমা আফরিন বিনা বলেন, ‘আমি ও আমার বান্ধবীরা এবার ৯টি গরম কাপড় দিয়েছিলাম। ২০ ডিসেম্বর গিয়ে দেখি সবগুলোই দুস্থরা নিয়ে গেছেন।
বনিফেসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বেলাল হোসেন বনি বলেন, এবার গত ১১ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত এই বৃক্ষ থেকে তিন হাজারেরও বেশি কাপড় নিয়েছেন দুস্থরা। এবার শীত বেশি পড়ায় কাপড় নেওয়ার প্রবণতাও বেশি। বিত্তবানেরা যদি আরও বেশি করে এখানে গরম কাপড় না দেন, তাহলে এই আইডিয়া চলমান রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই শীতে ছিন্নমূল, অসহায় মানুষের জন্য বনিফেসের শীত নিবারণ বৃক্ষ বিশাল উপকার করছে। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি এই শীত নিবারণ বৃক্ষে গরম কাপড় দেওয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন