বগুড়ার শেরপুরে তিন দিনের ব্যবধানে একাধিক ডাকাতি ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আরও সাত আন্তঃজেলা ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডাকাত সদস্যদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
বুধবার রাত ২টার দিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার কাছ থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ১টি লোহার ছুরি, ২টি হাসুয়া, লাঠি ও নাইলনের দড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এর আগে, গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজদার রহমান (৫২) ও রেজাউল করিমকে (৩৭) গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা বিগত ২৬ জুলাই রাতে একই উপজেলার ভবানীপুর বাজার এলাকায় শাহজাহান নামে এক প্রজনন ব্যবসায়ীকে হত্যা করে গরু-ছাগল ডাকাতি করার ঘটনায় জড়িত বলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুর থানায় প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান জানান, ধুনট উপজেলার চিকাশী ইউনিয়নের হটিয়ারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল সামাদ প্রামানিকের ছেলে শাহজাহান আলী। সে শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে কয়েক বছর ধরে অলির উদ্দিনের বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিল। সে জীবন জীবিকার জন্য এঁড়ে গরু দিয়ে প্রজনন ব্যবসা করছিল।
কিন্তু গত ২৬ জুলাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য ও হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজদার ও রেজাউল করিমসহ প্রায় ৮-৯ জন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য একটি ট্রাক নিয়ে এসে শাজাহান আলীর বাড়িতে ওই দিন রাত ২টার দিকে ৩টি গরু ও ১টি ছাগল ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শাহজাহান আলী তাদেরকে বাধা দিলে ডাকাতদল তার দুই হাতের বাহুতে ছুরিকাঘাত করার এক পর্যায়ে গলায় গামছা পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী এগিয়ে আসলে তাকেও গুরুতর আহত করে তিনটি এঁড়ে গরু ও একটি ছাগল (পাঠা) নিয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই শেরপুর থানায় মামলা দায়ের হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সোর্স ব্যবহার করে ডাকাত দলের অবস্থান নিশ্চিত করেন। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম, এসআই পুতুল মোহন্ত, এএসআই মিলন হোসেন সহ সঙ্গীয় ফোর্স গত ১ জানুয়ারি রাত অনুমান ২টার দিকে একই উপজেলার দলিল গ্রামে সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের প্রস্তুতিকালে এ অভিযান চালায়। এসময় ডাকাত সদস্যদের কয়েকজন পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে ৬জন ও এক জনকে সিরাজগঞ্জ রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ভেংরী (মির্জাপুর ভেংরী স্কুলপাড়া) গ্রামের বদিউজ্জামান বিদুর ছেলে নজরুল ইসলাম বিশা, রায়গঞ্জের কোদলা দিঘর গ্রামের মো. মহির উদ্দিনের ছেলে শাহেদ (৪২), দেবরাজপুর (মধ্যপাড়া) গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো, আশরাফ আলী (৪২), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মারিয়া গ্রামের মৃত খোকা ঋষির ছেলে মনি ঋষি মুচী( ৫০), ধুনট উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে রাসেল (২১), ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গারামের মৃত গনেশ চন্দ্র সরকারের ছেলে জয় চন্দ্র সরকার (১৯) (সে বর্তমানে ১৫ বছর যাবত শেরপুরের পূণ্যাতলায় বসবাস করে আসছিল), শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পানিসাড়া গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রুবেল (২০)।
গ্রেফতারকৃত ডাকাত সদস্য নজরুল ইসলাম বিশার বিরুদ্ধে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার ১০টির অধিকসহ সাহেদ, আশরাফ, রাসেল ও মনি মুচীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক চুরি ও ডাকাতির মামলা রয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে, গত ৩০ ডিসেম্বর সোমবার রাত ২ টার দিকে নাটোরের বনপাড়া থেকে কুখ্যাত ডাকাত আজদার আলী ও তেবাড়ীয়া হাট এলাকা থেকে রেজাউল করিমকে আটক করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে শেরপুরের ভবানীপুর এলাকার প্রজনন ব্যবসায়ী শাহজাহান হত্যা ও ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন
